ads
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ১২:০৪ অপরাহ্ন

আজ মাদারীপুর মুক্ত দিবস

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ১৭ বার পঠিত

আজ ১০ ডিসেম্বর মাদারীপুর মুক্ত দিবস। মাদারীপুরের সমাদ্দার এলাকায় পাক-বাহিনীর সাথে টানা ৩ দিন ২ রাতের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এদিন মুক্ত হয় এ জেলা। এই যুদ্ধেই শহীদ হন জেলার সর্ব কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু। জেলার সদর, শিবচর, রাজৈর ও কালকিনিতে অসংখ্য গণহত্যা চালিয়েছে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা। ১১টি গণকবর চিহ্নিত করা হলেও নির্মাণ করা হয়েছে দু একটি স্মৃতিস্তম্ভ। চারটি বদ্ধভূমির অনুমোদন ও বাজেট পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে দুইটির জায়গা পাওয়া গিয়েছে। বাকি দুইটির জায়গা এখনও নির্ধারন করা যায়নি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভেও টানানো হয়নি বীর শহীদদের তালিকা। বীর শহীদদের নামের তালিকা দ্রুত স্মৃতি স্তম্ভে টানানোর আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে মাদারীপুরে আলমগীর হোসাইন, স্টুয়ার্ট মুজিব ও খলিলুর রহমান খান ভারতের অম্বিকাপুর থেকে প্রশিক্ষণ শেষে পুলিশ, কৃষক, ছাত্রসহ সর্বস্তরের জনতা এক হয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলে।

মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলসামসদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। পাকবাহিনী তাদের দোসরদের নিয়ে মুক্তিকামী মানুষের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে তামা করে দিতে থাকে।

নিরীহ মানুষদের উপরও চালাতে থাকে গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুন্ঠন। এদেরকে পরাস্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা মারমুখী হয়ে উঠে। দীর্ঘ ৯ মাস চলে গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধ। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই মুক্তিযোদ্ধাদের একের পর এক আক্রমণে হানাদার বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। একে একে এলাকা ছাড়া হয়ে হানাদার ও তাদের দোসররা একীভূত হয় জেলা শহরের এ আর হাওলাদার জুট মিলের ক্যাম্পে।

মাদারীপুরের মুক্তিযোদ্ধারা রাজৈর উপজেলার কমলাপুর, পাখুল্যা, লাউসর, কদমবাড়ি, মহিষমারী, ইশিবপুর ও কবিরাজপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর সাথে লড়াই করে। পাকবাহিনী ও রাজাকারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ রাজৈর বড় ব্রীজ, আমগ্রাম ব্রীজ ও টেকেরহাটে।

এর মধ্যে, বৌলগ্রাম, রাজৈর থানা ও পাখুল্যায় মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। এখানে অংশগ্রহণ করেন সাবেক রক্ষীবাহিনীর ডেপুটি ডিরেক্টর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) সরোয়ার হোসেন মোল্যা। সকাল ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলে যুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে সাড়ে তিন শত মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিকামী মানুষ নিহত হয়।

এর মধ্যে এপ্রিল মাসে খালিয়ার সেনদিয়ায় একদিনে ১৩১ জন মুক্তিকামী মানুষ রাজাকার ও পাকবাহিনীর হাতে নিহত হন। ১৯৭১ সালে ঈদের আগের রাতে বৌলগ্রামে পাকবাহিনীকে অবরুদ্ধ করে রাখে মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াইয়ে পরাস্ত হয়ে সর্বশেষ ৩ ডিসেম্বর মধ্য রাতে পাকবাহিনী রাজৈর ছেড়ে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে মুক্তিযোদ্ধারা টেকেরহাট বন্দরে তাদের আক্রমণ করেন। পাকবাহিনী পালিয়ে গোপালগঞ্জের ছাগলছিড়া নামক স্থানে পৌছলে স্থানীয় গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। গ্রামবাসীর সহায়তায় ১৩৫ জন পাক হানাদারকে বন্দী করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা মাদারীপুরের কালকিনি থানার বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা লুট তরাজ, অগ্নি সংযোগ এবং হত্যাযজ্ঞ চালায়। গ্রামের পর গ্রাম পুড়ে তামা করে দেয় হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা। ১৭ অক্টোবর পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার কর্তৃক কালকিনি থানার বৃহত্তম বাণিজ্য কেন্দ্র ফাঁসিয়াতলা হাটসহ এলাকার বহু স্থানে অসংখ্য মানুষকে নৃসংশভাবে হত্যা করে এবং ঘরবাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে। বিজয়ের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা হত্যাযজ্ঞের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারাও দেশ মাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে।

১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর রাতে কালকিনি উপজেলার ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কালকিনি উপজেলার সিডিখান, এনায়েতনগর, সমিতিরহাট ছাড়াও পাশের বরিশালের গৌরনদী ও মুলাদী উপজেলা এবং কালকিনির সীমান্তবর্তী ৩টি স্থানে মুখোমুখি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাকবাহিনীকে পরাস্ত করেন। ৮ ডিসেম্বর কালকিনি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে কালকিনি ত্যাগ করে পাক হানাদার বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভূরঘাটার পাশে একটি ব্রীজের কাছে মানুষ ধরে এনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিত পাকবাহিনী। ব্রীজের নিচে পানিতে মানুষের লাল রক্তে রঞ্জিত হওয়ায় পরে এই ব্রীজের নাম হয় লালপোল বা লালব্রীজ যা এখনও মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। তবে ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও আটকে পরা পাকবাহিনীর সদস্যদের সাথে ২২ দিন যুদ্ধ হয় বরিশালের গৌরনদীর এলাকায়। সেখানেও অংশগ্রহণ করে মাদারীপুরের কালকিনির মুক্তিযোদ্ধারা।

দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মাদারীপুরের মুক্তিযোদ্ধারা একের পর এক পরাস্ত করতে থাকে পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের।বিভিন্ন স্থানের যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে পাকবাহিনী ও দোসররা মাদারীপুর থেকে পালিয়ে যাবার কৌশল খুঁজতে থাকে।মুক্তিযোদ্ধারা গোপনে জানতে পারেন,পাকহানাদার বাহিনী মাদারীপুরের এআর হাওলাদার জুট মিলের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ সংবাদের ভিত্তিতে খলিল বাহিনীর প্রধান খলিল খানের নেতৃত্বে ৮ ডিসেম্বর সারারাত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সমাদ্দার ব্রিজের চতুর্দিকে অবস্থান নেয়। ব্রিজটি জেড ফোর্সের মুক্তিযোদ্ধারা আগেই মাইন দিয়ে উড়িয়ে দেয়ায় শত্রুবাহিনী গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেটে ক্ষতিগ্রস্থ ব্রিজ এলাকা পার হচ্ছিল। তখনই খলিল বাহিনী প্রধান খলিলুর রহমান খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা চতুর্মুখী আক্রমণ করে। তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। একটানা ৩ দিন ২ রাতের যুদ্ধে গ্রামবাসীও এগিয়ে আসে।

১০ ডিসেম্বর বিজয়ের আগ মুহুর্তে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু শহীদ হন এবং গুরুতর আহত হন আখতারুজ্জামানসহ অনেকে।এ যুদ্ধে ৪০ জন পাক সেনা নিহত হয়। সন্ধ্যায় মেজর খট্টকের নেতৃত্বে ৩৯ জন পাকসেনা ও ১৫ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে।শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর। এই স্থানে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের বদ্ধভূমি থেকে ১৯৭২ সালে ১৮৩ শহীদের মাথার খুলি উদ্ধার হলেও সেখানে এখনো গো-চারণ ভূমি। এছাড়াও জেলার সকল উপজেলার গণকবরগুলোরই বেহাল দশা। ফলে জেলার নতুন প্রজম্মের মাঝ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। স্মৃতি স্তম্ভে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাসহ কুখ্যাত রাজাকারদেরও তালিকা প্রকাশের দাবি। একই সাথে মাদারীপুরের চিহ্নিত রাজাকার আলবদর আল শামসদের আইনের আওতায় এনে বিচার এবং তাদের সন্তানদের সরকারী চাকুরী থেকে অপসারণের দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা।

খলিল বাহিনীর প্রধান খলিলুর রহমান খান বলেন, আজকের দিনটি আমাদের মাদারীপুরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এইদিনে পাকহানাদার বাহিনী সমাদ্দার ব্রীজে আমাদের সাথে সম্মুখ সমরের যুদ্ধে তারা আত্মসমর্পণ করে। এই যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হই এবং এখানে মেজর আব্দুল হামিদ খট্টক এবং আরো জীবিত ৩৯ জন পাকসেনা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে। এখানকার যুদ্ধে ২০ পাকহানাদার ও ৩০ রাজাকার নিহত হয়। এ যুদ্ধে মাদারীপুরের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু ১০ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে শহীদ হন এবং আক্তারুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।

মাদারীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার মো. শাজাহান হাওলাদার জানান,৪৩ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভূক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো তা গেজেটভূক্ত হয়নি। ১১টি বদ্ধভূমি চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে মাদারীপুরে ৪টি,কালকিনি ৩টি,রাজৈরে ৩টি ও শিবচরে ২টি।চারটি বদ্ধভূমির অনুমোদন ও বাজেট পাওয়া গিয়েছে।কিন্তু জায়গার অভাবে সেটি করা যাচ্ছেনা। ৪৩জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেটভূক্ত হয়ে আসলে স্বাধীনতা স্তম্ভেও দ্রুত টানানো হবে বলে তিনি জানান।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভে টানানোর প্রস্তুতি চলছে।

এক সাগর রক্ত আর লক্ষাধিক মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময় দেশ স্বাধীন হলেও মাদারীপুরে মাটিতে এখনও এদেশীয় দোসররা ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। তাই বিজয়ের এ মাসেই সকল যুদ্ধপরাধীসহ রাজাকারদের বিচারের আওতায় এনে মাদারীপুর কলঙ্কমুক্ত করার দাবী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের।

সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

Prayer Time Table

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৩:৫২
  • ১১:৫৮
  • ১৬:৩৩
  • ১৮:৪০
  • ২০:০৩
  • ৫:১৩
ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ওয়ালি উল্লাহ
নির্বাহী সম্পাদক
নিউজ রুম :০২-৯০৩১৬৯৮
মোবাইল: 01727535354, 01758-353660
ই-মেইল: editor@sristybarta.com
© Copyright 2023 - SristyBarta.com
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102