১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর। পাকিস্তানি বাহিনীর নীল নকশায় নিভিয়ে দেয়া হয় বাঙালির মেধার আলো। এই হত্যাযজ্ঞ বাস্তবায়নে তাদের সহায়তা করে রাজাকার, আল বদর ও আলশামস বাহিনী। ব্যক্তি বিশেষকে বিচারের মুখোমুখি করা গেলেও, দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার হয়নি।
শহীদ পরিবারে সদস্য এবং ইতিহাস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ব্যাপারে সরকারকে তৎপর ভূমিকা নিতে হবে। আর আইনমন্ত্রী বলছেন, একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার অমীমাংসিত বিষয় দ্রুতই সমাধানে বদ্ধপরিকর আওয়ামী লীগ সরকার।
পরাধীনতার শৃঙ্খল একে একে টুকরো টুকরো হয়ে হয়ে যাচ্ছিল। রুদ্ধ লৌহ কপাটের অর্গল তখন মুক্তির অপেক্ষায়। ঠিক তখনই বাঙালি জীবনে নিকষ কালো রাত।
মেজর জেনারেল রাওফরমান আলীর শীতল পরিকল্পনায়, বাসা থেকে ধরে নিয়ে একে একে হত্যা করা হয় সূর্য সন্তানদের। রায়েরবাজার, মিরপুরসহ সারাদেশে পৃথিবীর নৃশংসতম বধ্যভূমিতে পরিণত করেন ঘাতকরা।
আত্মসমর্পণের আগে, মেরুদণ্ডহীন,কাপুরুষ এই নরপশুরা শেষ কামড় দিয়েছে বিষধর সাপের মত। বাঙালি জাতির উত্থানে প্রতিহিংসা আর নির্মম আক্রোশে এই হত্যা চালানো হয়।
এর পর পেরিয়েছে দীর্ঘ সময় । এখনো অমীমাংসিত রয়েছে অনেক বিষয়। বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্যতম দুইনেতা চৌধুরী মাঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খানকেদেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা যায়নি আজও। এছাড়াও, বুদ্ধিজীবী হত্যার হন্তারক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে করা হয়নি বিচারের মুখোমুখি।
ইতিহাসবিদ শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘এটা গণহত্যা বা বুদ্ধিজীবী হত্যা বলুন এটা তো জামাতের রাজনীতির অংশ। আমরা দুএকজন ঘাতকের বিচার করলাম এটা যথেষ্ট বলে আমি মনে করিনা। এদের রাজনীতি বাংলাদেশে থাকতে পারবে না।’
শহীদ মুনীর চৌধুরীর সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, ‘জামাত ইসলামী বা এদের যেকোনো অঙ্গসংগঠন সেই সময়ে জড়িত ছিল বিভিন্ন হত্যা ও পাকিস্তানীদের সহায়তার জন্য। তাদেরকেও এই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে শামিল করতে হবে।’
এ বিষয়ে সরকার কি ভাবছে? প্রশ্ন ছিল আইনমন্ত্রীর কাছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমরা জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে জামাত ইসলামকে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধে বিচার করতে হবে। আমাদের আদালত একটা রায় ঘোষণা করেছে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই রায় কার্যকর করা। এই রায় কার্যকর করার জন্য যা যা প্রয়োজন শুধু সেটাই করবেই না করছে।’
জেনারেল ফরমান আলী তার ডায়রিতে লিখেছিলেন, বাংলার মাটি রক্তে লাল করে দেবেন তিনি। তা তিনি দিয়েছিলেনও বটে, তারপরেও বুদ্ধিজীবী হত্যার দুইদিনের মাথায় স্বাধীন বাংলার লাল সূর্য দেখেছে বাংলার মানুষ।
সূত্রঃ সময় সংবাদ