ঝালকাঠি পৌরসভাধীন উত্তর কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্পের সাড়ে ৪শ’ পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। এখানকার বেশিরভাগ ঘরের বেড়া নেই। চালার টিনে শত ছিদ্র, বাইরে বৃষ্টি পড়ার আগে ঘরে পরে এমন অবস্থা।
ড্রেন রাস্তা ঘাট নেই বললেই চলে। বর্ষার সময় হাঁটু পানি কাদা ভেঙে চলাচল করে এখানকার মানুষগুলো। এমনকি চিকিৎসার জন্য নেই কোনও কমিউনিটি ক্লিনিক। বড় ধরনের দুর্যোগে আশ্রয় নেয়ার মতো এখানে নেই কোনও আশ্রয় কেন্দ্র। শীতে মৌসুমে শুরুতে ভাঙা বেড়া দিয়ে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস ভেতরে প্রবেশ করছে। এখানকার বেশিরভাগ শৌচাগার ও গোসলখানাগুলো বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী। রাস্তাঘাট ভাঙা ও কাচা মাটির থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বসবাসকারীরা।
২০০৫ সালে ঝালকাঠি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৫ একর খাস জমিতে উত্তর কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। বাসন্ডা নদী সংলগ্ন এ প্রকল্পে প্রথমে আড়াইশ পরিবারকে আশ্রয় দেয়া হলেও দু’দফা সম্প্রসারিত করে সেখানে ঠাঁই দেয়া হয় সাড়ে ৪শ’ পরিবারকে।
তিনটি ব্যারাকে নির্মাণ করা হয় ৪৫০টি ঘর। সংস্কার না হওয়ায় প্রকল্পের ৪শ’ পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রকল্পের ঘরগুলো দেখলে যে কারোরই মনে হবে বহু আগেই এগুলো পরিত্যক্ত হয়েছে। অথচ এখানে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় করে বাস করে প্রায় ৫ হাজার মানুষ। শতছিদ্র টিনের চালাবিশিষ্ট বেশিরভাগ ঘরেই বেড়া নেই।
প্রকল্পের ৪৫টি পারিবারের ব্যারাকে যাওয়ার পথের পুলটি ভাঙা। যাতায়াত করার সময় মাঝে মধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে হাঁটু কাদা পানি ভেঙে চলাচল করে এখানকার মানুষগুলো। দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয় নেয়ার মতো নেই কোনও আশ্রয়কেন্দ্র। চিকিৎসার জন্য কোনও কমিউনিটি ক্লিনিকও নেই এখানে। এক ভয়ানক অমানবিক পরিবেশে জীবন যাপন করছে এখানকার বাসিন্দারা।
আবাসনের বাসিন্দা চা দোকানদার মো. রহিম বলেন, আবাসনে ঘর পেয়ে প্রথমে ভালো ছিলাম। এখন এ ঘরে থাকা যায় না। কি করবো, আমাদের তো থাকার কোনও জায়গা নেই। বৃষ্টিতে ভিজেছি আর এখন শীতে কষ্ট করি।
দশটি পরিবারের জন্য ২টি শৌচাগার ও ২টি করে গোসলখানা রয়েছে এখানে। শৌচাগারগুলো এখন ব্যবহারের অযোগ্য। পয়নিস্কাসনের জন্য ব্যারাকে কোনও ড্রেন না থাকায় ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি যাচ্ছে এখানকার একমাত্র পুকুর। আর দূষিত হচ্ছে গোটা পুকুরের পানি। আর এই পানি ব্যবহার করছে বাসিন্দারা।
বাসিন্দা পারবিন বেগম বলেন, পরিবার নিয়ে বসবাস করি। নামে ঘর কামে কিছুই নাই। ঘরের টিন বেড়ার নাই পলিথিন টাঙিয়ে থাকি।
বর্তমান অবস্থায় প্রতি ঘরে ৩ বান করে টিন প্রয়োজন। দু’বছর আগে ঘর প্রতি দু’টি করে টিন লাগিয়ে ছিল সদর উপজেলা প্রশাসন। এ প্রকল্পের যাত্রা ১২ বছর হলো এর মধ্যে শুধু এই সংস্কার করা হয়েছে।
আবাসন প্রকল্প সমবায় সমিতি সাধারণ সম্পাদক মন্টু খলিফা আবাসনের দ্রুত সংস্কারের দাবি করে বলেন, বিভিন্ন সময় আবাসনের এসব সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কর্মকর্তা এখানে পরিদর্শনে এসে সংস্কারের কথা বলে চলে যান। আমাদের জরাজীর্ণ ঘর মেরামতের কোনও উদ্যোগ নেই।
ঝালকাঠি পৌর মেয়র মো. লিয়াকত আলী তালুকদার বলেছেন, আবাসন প্রকল্পের পানির সমস্যা নিরসনে কাজ করা হয়েছে। বসবাসকারীদের জন্য পৌরসভা থেকে ফ্রি পানির সাপ্লাই এর প্রায় ১০০ কল বসানো হয়েছে। ব্যারাকের পরিবারদের পৌরসভা থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেকুন নাহার জানান, তারা ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আবাসনের সমস্যা সমাধানের জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ আসলে খুব দ্রুত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।
এখানকার বসবাসকারীদের একটাই দাবী দ্রুত প্রতিটি ঘরের চালের টিন পরিবর্তন করে নতুন করে চালা তৈরি এবং শৌচাগার ও গোসলখানাগুলো সংস্কার করে ব্যারাকগুলো বসবাসের উপযুক্ত করে দিবেন কর্তৃপক্ষ।