উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলীর ওপর হামলার ঘটনায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এ ঘটনার পর দিনাজপুরের হাকিমপুর, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ এবং র্যাব রংপুর-১৩-এর একটি দল যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে আজ শুক্রবার ভোরে জাহাঙ্গীর আলমকে তাঁর নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। একই সময়ে হিলির কালিগঞ্জ এলাকায় বোনের বাড়ি থেকে আটক করা হয় উপজেলা যুবলীগের সদস্য আসাদুল ইসলামকে। দুজনকেই বিকেলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি বহিষ্কার করেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুরে র্যাব-১৩-এর অধিনায়ক রেজা ফেরদৌস আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীরকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান।
ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় কতজনকে আটক করা হয়েছে- এমন প্রশ্নে রেজা ফেরদৌস আহমদ বলেন, ‘আইনানুগ প্রক্রিয়ার মধ্যে এখনো পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক তো বিশদ বিষয়, আমরা আর কাউকে আটক করিনি। এখনো পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা মোট ছয়জনকে এনেছিলাম। যেমন জাহাঙ্গীরকেও আমরা এনেছিলাম, কথাবার্তা বলা শেষে সে চলে গিয়েছে। আমরা তাকে ছেড়ে দিয়েছি।’
এ সময় একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘জাহাঙ্গীরের একটি রাজনৈতিক পরিচয় আছে। তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে সংগঠন থেকে। তাকে আপনারা কোনো কারণ ছাড়াই এনেছিলেন?’
এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব কর্মকর্তা রেজা ফেরদৌস আহমদ বলেন, ‘না, কোনো কারণ ছাড়া তো তাকে অবশ্যই আনিনি। জাহাঙ্গীরের বিষয়ে আমাদের কাছে কিছু পেশাগত বা গোয়েন্দা তথ্য ছিল, সেজন্য আমরা তাকে এনেছিলাম। আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। যাকে হিসেবে নেওয়ার মতো তাকে আমরা নিয়েছে, যাকে নেওয়ার মতো নয়, তাকে নেইনি।’
র্যাব অধিনায়ক আরো বলেন, ‘তবে আমাদের এই ছায়া তদন্ত কিন্তু এখন শেষ নয়। এটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা হয়তো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরো কয়েকজনকে নিয়ে আসতে পারি। যাদেরকে আমরা সন্দেহভাজন হিসেবে ধরবো, তাদেরকে নজরদারিতে রাখা হবে।’
রেজা ফেরদৌস আহমদ বলেন, ‘এ মামলার অভিযুক্ত মূল আসামি মো. আসাদুল হককে আমরা ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করি এবং জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে এই জঘন্যতম ঘটনার সঙ্গে তার নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। এবং এই ঘটনায় সে দাবি করে যে, মো. নবিরুল ইসলাম ও শ্রী সান্টু কুমার বিশ্বাস এই দুজন তাঁর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।‘
‘আসাদুলের দাবি অনুযায়ী, এটি একটি নিছক চুরির অভিপ্রায় থেকে সংগঠিত হওয়া ঘটনা। যার মূল পরিকল্পনা ছিল নবিরুলের’, যোগ করেন র্যাব কর্মকর্তা।
গত বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত মই বেয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে। তারা বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা খানমকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এ সময় ইউএনওর চিৎকার শুনে পাশের কক্ষে থাকা তাঁর বাবা ছুটে এসে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তাঁকেও আঘাতে জখম করে। পরে কোয়ার্টারের অন্য বাসিন্দারা তাদের চিৎকার শুনে পুলিশকে খবর দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াহিদা খানমকে ঢাকায় আনা হয়।
ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচার গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সম্পন্ন হয়েছে। সবশেষ তাঁর জ্ঞান ফিরেছে। তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে কথাও বলেছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত হননি। তবে, তাঁর সেরে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
এ ঘটনায় আসাদুলসহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অন্য দুজন হলেন- রংমিস্ত্রি মো. নবিরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার বিশ্বাস। নবিরুল ইসলাম ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের সামনে রংমিস্ত্রির কাজ করেন।