ঈশ্বরদী প্রতিনিধিঃ ঈশ্বরদীতে সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আ.লীগের দু’গ্রুপের কয়েক দফার সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। পাবনা-৪ আসনের আসন্ন উপ-নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনকে অভ্যর্থনা জানানোকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।
বর্ধিত সভাস্থলে এবং দলীয় কার্যালয়ের মধ্যেই একাধিক নেতাকর্মীর ছুরিকাঘাতের ঘটনাও ঘটেছে। উপ-নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক ইছাহক আলী মালিথার সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ বেলা ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চলতে থাকে। এ সংঘর্ষের কারণে ঈশ্বরদীর উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইছাহক আলী মালিথা, আওয়ামী লীগ নেতা আবু কালাম, মুলাডুলি ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কার মালিথা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির মালিথা, পৌর যুবলীগের সভাপতি আলাউদ্দিন বিপ্লব, উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে যুবলীগ কর্মী নাজিম উদ্দিন রনি খান, পৌর যুবলীগের সাবেক সভাপতি সানোয়ার হোসেন লাবু, আবুল কালাম, রিকশা চালক ওলিউর রহমান, যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম, ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আজিজ, ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলবার হোসেন ও যুবলীগ নেতা আমিরুল ইসলাম। এসময় ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ মিন্টুও সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, পাবনা-৫ আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপিসহ পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের উপস্থিতিতেই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনার আকস্মিকতায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, পাবনা-৪ আসনের আসন্ন উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে সোমবার ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনকে অভ্যর্থনা জানাতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলীয় নেতারা অপেক্ষায় ছিলেন। অভ্যর্থনায় সামনে থাকাকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক ইছাহক আলী মালিথার মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এ থেকেই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। এরই রেশ ধরে তাৎক্ষণিকভাবে পৌর আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এক পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলের চেয়ার একে অপরের দিকে ছুঁড়ে মারতে থাকেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও এসময় সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থ হন। পরে দফায় দফায় সংঘর্ষ অন্যান্য নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের মধ্যেই ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন যুবলীগ নেতা সানোয়ার হোসেন লাবু ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খানের ছেলে রনি খান। তাদের দু’জনকে প্রথমে পাবনা ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা ভর্তি করা হয়।
সংঘর্ষের সময় ঈশ্বরদী শহরের স্টেশন রোডে ও বাজার এলাকার দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাস্তায় উৎসুক জনতা সমাবেত হয়। এসময় শহরের মূল রোডে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হলে জসাধারণ জনগণ দুর্ভোগে পড়েন। আতঙ্কিত মানুষদের এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায়।
ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ মিন্টু বলেন, এ ঘটনা নৌকার নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর উপ-নির্বাচনে নৌকার বিজয় লাভ করার মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্রের জবাব দেয়া হবে।
অপরদিকে ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইছাহক আলী মালিথা বলেন, নির্বাচন বানচালের জন্য পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিন্টু ইচ্ছাকৃতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ ঘটনা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ঈশ্বরদীর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য জেলা কমিটিকে বলা হয়েছে। অনাকাঙ্খিত এ ঘটনার সঙ্গে ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আলী মূর্তজা সনি বিশ্বাস ঈশ্বরদী উপজেলা যুবলীগ ও পৌর যুবলীগের কার্যক্রম স্থগিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ নাসীর উদ্দীন এ ঘটনা সম্পর্কে বলেন, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনোপক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি তবে শহরের পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।