ads
রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়াই নারী পুলিশের স্বামীকে ‘শিবিরকর্মী’ বানানোর অভিযোগ দুই ওসির বিরুদ্ধে

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ, ২০২১
  • ৯ বার পঠিত

দুই ওসির কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়াই এক নারী পুলিশ পরিদর্শকের স্বামীকে ‘শিবিরকর্মী’ বানিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (২৪ মার্চ) বিকেলে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিতভাবে দুই ওসি ও এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগটি করেছেন ওই নারী পুলিশ পরিদর্শক।

অভিযুক্ত দুই ওসি হলেন, দামকুড়া থানায় কর্মরত ওসি মাহবুব আলম ও আরএমপির বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ।

এ ঘটনার বিষয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত দামকুড়া থানার ওসি মাহবুব আলম ওই নারী পুলিশ পরিদর্শকের সাবেক স্বামী। ২০১৮ সালে ওসি মাহবুবের সাথে তার বিচ্ছেদ ঘটে। এরপরে ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা আবার বিয়ে করেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত ওসি মাহবুবও পুলিশে কর্মরত আরেক নারীকে বিয়ে করেন।

অভিযোগকারী নারী পুলিশ পরিদর্শক বর্তমানে রাজশাহীর চারঘাটে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্তিতে কর্মরত আছেন।

অভিযোগে নারী পুলিশ পরিদর্শক উল্লেখ করেন, ‘২০১৩ সালে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব আলমের সাথে আমার বিয়ে হয়। শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হওয়ার কারণে আমি নিরুপায় হয়ে ২০১৮ সালে মাহবুব আলমের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাই। তারপর থেকে মাহবুব আলম আমাকে তার সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য বিভিন্নভাবে বিরক্ত করে থাকে। পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানার ললিতাহার এলাকার আব্দুল ওদুদের ছেলে মাহবুব হুসাইনের সাথে আমার বিয়ে হয় এবং আমি সুখে শান্তিতে বসবাস করছি।’

অভিযোগে আরও উল্লেখ করে বলা হয়, ‘রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ রাজশাহীতে যোগদান করার পর আমার সঙ্গে পরিচয় হলে আমি তাকে কথার প্রসঙ্গে আমার বিষয়গুলো জানাই। তারপর থেকে নিবারণ চন্দ্র বর্মণ আমাকে প্রায় সময় বিরক্ত করতে থাকেন। আমি বিষয়টি না বোঝার ভান করে তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।

অন্যদিকে পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব আলম বোয়ালিয়া থানার ওসি (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই সময় ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ মাহবুব আলমের বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাকে মাঝে মাঝে ফোন করতেন এবং বলতেন ‘একই শহরে অন্য ছেলেকে বিয়ে করে তুমি কি সংসার করতে পারবা? তুমি তো বিপদে পড়ে যাবা।’

এছাড়া পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব আলমও আমার বর্তমান স্বামী মাহবুব হুসাইনকে মতিহার থানায় ডেকে নিয়ে বিভিন্ন হুমকি দিয়েছিলেন। তখন বলেছিলেন, ‘নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে বিয়ে করে তুমি ভালো থাকতে পারবে না। ওর সাথে মিশে তুমি আমার সাথে শত্রুতা তৈরি করো না।’

অভিযোগে ওই নারী পুলিশ আরও লিখেছেন, ‘গত ১৬ মার্চ রাত দেড়টার সময় আমার স্বামী মাহবুব হুসাইন আমাকে ফোন করে বলেন বাসায় পুলিশ এসেছে। আমি আমার স্বামীর ফোন থেকে বোয়ালিয়া থানার ওসি (তদন্ত) লতিফের সাথে কথা বলি। তারা তখন আমার শ্বশুর-শাশুড়ির বাসা থেকে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর আনুমানিক রাত ২টা ২০ মিনিটে পুনরায় এসে আমার স্বামীকে নিয়ে যায়।

আমি পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) লতিফকে ফোন করে বলি তুমি কি ওকে (মাহবুব হুসাইন) নিতে গেছো? লতিফ জানায় হ্যাঁ নিতে গিয়েছি।’ এরপর থেকে আমি বেশ কয়েকবার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ, ওসি (তদন্ত) লতিফকে ফোন করি এটা জানার জন্য যে, তারা আমার স্বামীকে কেন নিয়ে গেছে? কিন্তু আমি পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তারা আমার ফোন রিসিভি করে নাই।

তারপর সকাল ৮টা ১০ মিনিটের দিকে আমি বোয়ালিয়া থানায় আসি। ডিউটি অফিসার এএসআই চাঁদ সুলতানা আমাকে জানায় যে, আমার স্বামীকে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে আসা হয়েছে রাত ২টা ৩০ মিনিটের পর। ওই সময় আমি ডিউটি অফিসারের সাথে এবং থানার অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সাথে আলোচনা করে জানতে পারি আমার স্বামীর নামে তাদের কাছে কোনো রাজনৈতিক তথ্য নেই।

সে সময় আমি আমার স্বামীর সাথে দেখা করতে চাইলে ডিউটি অফিসার জানায় ওসি স্যারের নিষেধ আছে। সকাল অনুমানিক ৮টা ৩০ মিনিটে ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় থানায় এসে হেসে আমাকে বলেন, ‘সেইতো দৌড়াইয়া আমার কাছে আসতে হলো। তবে সময়মতো আসো নাই, তখনতো আমাকে ভালো লাগে নাই। পরে তিনি আমায় বললেন, ‘তোমার স্বামী তো শিবিরকর্মী করে।’

তখন আমি বললাম, না স্যার ও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না।’ ওসি নিবারণ আবার বললেন, ‘পুলিশ কমিশনার স্যারের কাছে তোমার কথা বলি, তিনি বললে তোমার স্বামীকে ছেড়ে দেব।’

এরপর আমি বললাম, স্যার আমি কি আপনার সঙ্গে কমিশনার স্যারের কাছে যাব?’ সে সময় ওসি নিবারণ স্যার বললেন, ‘না তোমার যেতে হবে না।’

পরে আমি ডিউটি অফিসারের রুমে অসহায়ের মতো বসে থাকলাম। আনুমানিক দুপুর একটার দিকে ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ থানায় ফিরলেন। আমি পেছন পেছন তার অফিস রুমে ঢুকলাম। তখন তিনি বললেন, ‘তোমার স্বামীর নামে মামলা হবে।’ আমি বললাম, ‘স্যার আমি কি আমার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে পারব?’ ওসি নিবারণ অনুমতি দিলেন।

আমি আমার স্বামীর সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখি আমার স্বামীর মুখে হাতে আঘাতের চিহ্ন। আমার স্বামীকে দেখে তার দুইটি মোবাইলের একটা ওসি স্যারের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে কোর্টে চলে আসি।

ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমার স্বামীসহ গ্রেপ্তারকৃত অন্যান্যদের কোর্ট নিয়ে আসে। সে সময় জানতে পারি আমার স্বামীর নামে সন্ত্রাস দমন আইনের মামলা দিয়েছে। এবং তার নামের পাশে শিবিরকর্মী লিখে দিয়েছে। কিন্তু আমার স্বামী কোনোভাবেই জামাত-শিবিরে সাথে জড়িত না। মূলত আমার স্বামী কোনো রাজনৈতিক দলের সাথেই জড়িত নয়। কোনো দলীয় কমিটিতে আমার স্বামীর নাম কেউ দেখাতে পারবে না।

পরে জেলখানায় আমার স্বামী সাথে দেখা করতে গেলে আমাকে জানান, বোয়ালিয়া থানার এসআই মতিনসহ ওই টিমে থাকা অন্যান্য সদস্যরা শুধু আমার স্বামীকে শারীরিক নির্যাতন করেছেন।

এসআই মতিন আমার স্বামীকে বলেছে, ‘মাহবুব স্যারের বউকে বিয়ে করার শখ হয়েছে তোর। মাহাবুব স্যার তোর জীবন বরবাদ করে দেবে। তুই মনে রাখিস।’

ওই নারী পরিদর্শক অভিযোগে আরও লিখেছেন, ‘আমার স্বামী রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নয়। আমার স্বামীকে নিয়ে সহজ স্বাভাবিক ও শান্তিময় জীবন-যাপন করছিলাম। ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ তার ব্যক্তিগত নোংরা উদ্দেশ্য আমার ওপর প্রয়োগ করতে না পেরে এবং ওসি মাহবুব আলম আমার উপর পূর্ববর্তী আক্রোশ থেকে আমার জীবনটা ধ্বংস করে দেয়ার উদ্দেশ্যে আমার স্বামীকে মিথ্যা বানোয়াট মামলায় চালান দিয়েছে। আমি পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে যেন হেয় প্রতিপন্ন হই সেজন্যই এই ধরনের কাজ করেছে।

আমি বাংলাদেশ পুলিশের একজন নারী সদস্য। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রোশবশত আমার এবং আমার স্বামীর ওপর এই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ এবং ওসি মাহবুব আলমসহ আমার স্বামীকে যারা থানায় শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিনীত আবেদন করছি।’

এ ঘটনার বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, এ ধরনের একটি অভিযোগ আসার কথা শুনেছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এদিকে নারী পুলিশ কর্মকর্তার এ অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পুলিশ কমিশনারের প্রতি সুপারিশ করেছেন বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি রাজশাহীর অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার গোলাম ফারুক।

সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

Prayer Time Table

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:২৪
  • ১২:১৬
  • ১৬:১১
  • ১৭:৫১
  • ১৯:০৬
  • ৬:৩৭
ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ওয়ালি উল্লাহ
নির্বাহী সম্পাদক
নিউজ রুম :০২-৯০৩১৬৯৮
মোবাইল: 01727535354, 01758-353660
ই-মেইল: editor@sristybarta.com
© Copyright 2023 - SristyBarta.com
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102