খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদনের বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছেও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন তারা। যদিও সর্বশেষ বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা না করা তার পরিবারের বিষয়, আবেদন করলে পরিবারই করতে পারে। এখানেও স্পষ্ট তথ্য দেননি মির্জা ফখরুল।
তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির আগে থেকেই তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠানোর কথা বলছে বিএনপি এবং পরিবারের সদস্য।
এর আগে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।’
একই ধরণের কথা বলেন তার ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কিছু জানি না।’
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই নিজ বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু তার মুক্তির মেয়াদ দুই মাসেরও কম সময় রয়েছে। তাই খুব শিগগিরই দেশের কোন হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য এবং প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবারের সদস্যরা আবেদন করবেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, মানবিক কারণে দণ্ড স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে গত ২৫ মার্চ কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছে সরকার। সরকারের শর্ত দুটি হলো- তিনি নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। তাই খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের হাসপাতালে কিংবা বিদেশে পাঠাতে তার পরিবারের সদস্যরা আবেদন করবেন। কিন্তু কবে নাগাদ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবারের সদস্যরা আবেদন করবেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে খুব শিগগিরই আবেদন করবেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা ভাবছি তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করবো।’
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডাম এতোই অসুস্থ যে, নিজে বাসার নিচে নামতে পারেন না, হাটতেও পারেন না। তার এখনো খাওয়া-ধাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। আসলে ম্যাডামের উন্নত চিকিৎসা যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে না। হাসপাতালেও যাওয়া যাচ্ছে না এখন যে পরিস্থিতি চলছে। সব মিলিয়ে তার শারীরিক অবস্থাটা ভালো না।’
খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘উনাকে জামিন না দেয়াটা আইনে হস্তক্ষেপ এবং বিচারপতিদের কোমর ভাঙা। আর উনার যে অপরাধ…। ধরেই নেই উনা’র দুই কোটি টাকা…। কিন্তু এটার জন্য উনার জামিন না দেয়া অন্যায়। আর এটার মাধ্যমে প্রমাণ করে যে, বিচারপতিরা অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক। সুতরাং এখনই তাদের উচিত হবে, উনার জামিনটা দিয়ে দেয়া।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমি মনে করি, উনার উচিত হবে দেশে চিকিৎসা করা।’
অন্যদিকে দীর্ঘ ২৫ মাস সাজা ভোগের পর মুক্তি পেয়ে গুলশানের ভাড়া বাড়ি ফিরোজায় গিয়ে উঠেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এরপর থেকে সেখানেই আছেন তিনি। তবে শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের মধ্যে মুক্তির মেয়াদ দুই মাসেরও কম সময় রয়েছে। তাই এখন প্রশ্ন উঠেছে, ৬ মাস পরে কি করবেন?
খালেদা জিয়ার নির্বাহী আদেশে মুক্তির ৬ মাসের সময়সীমা প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে পরবর্তী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বিষয়টা নিয়ে এখনো বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। সময় আসলে আলোচনা হবে।’
মুক্তির দিন থেকেই ফিরোজার দোতলার ঘর রুমে খালেদা জিয়া কোয়ারেন্টাইনে আছেন। সঙ্গে নার্সসহ কয়েকজন আছে। আর বেগম জিয়ার চিকিৎসার সব কিছু লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান তত্ত্বাবধায়ন করছেন।