নোয়াখালীতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও দায়িত্বরত চিকিৎসকদের অবহেলায় এক নবজাতকের (ছেলে) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই নবজাতকের দাদী তাহের বেগম নয়ন (৫১) বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) আদালতের বিচারিক হাকিম সোয়েব উদ্দিন খান মামলাটি আমলে নিয়ে এক কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত প্রতিবেদন দিতে হাসপাতালের আরএমওকে নির্দেশ দিয়েছেন।
দুপুরে নোয়াখালী সিনিয়র জুডিসিশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনকে আসামি করে এ মামলাটি দায়ের করেন তাহের বেগম।
মামলায় হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ২নং ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স বিথীকা রাণী হাওলাদার, গাইনী বিভাগের প্রধান ডা. লাইনুন নাহার, ডা. নাছির (ইন্টার্নি), সিনিয়র নার্স সামছুন নাহার, মমতাজ বেগম, ম্যাটস ছাত্র নাঈম, আয়া পুতুল রানী, জুহুরা বেগম ও সারজাহানকে আসামি করা হয়েছে।
জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সরোয়ার মেম্বার বাড়ির জীবন উদ্দিন ও আসমা আক্তার দম্পতির সন্তান ছিল।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১অক্টোবর বুধবার ভোর ৫টার দিকে আসমা আক্তারের প্রসব ব্যথা উঠলে তার শাশুড়ি তাহেরা বেগম নয়ন আসমাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ২নং ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করেন। ভর্তির রেজিস্টেশন নাম্বার ৪৯৪৭৩/১১, তারিখ ২১/১০/২০২০ইং। ভর্তির পর গৃহবধূর শাশুড়ি নয়ন হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স বিথীকা রাণী হাওলাদারকে বার বার ডাকা সত্ত্বেও তিনি ঘুম থেকে উঠেন নি।
কিছুক্ষণ পর নার্স বিথীকা ঘুম থেকে উঠে ইন্টার্নি ডা. নাছির ও আয়া মারজাহানের বলেন, টাকা দিলে তারা বাচ্চা নরমাল ডেলিভারি করার চেষ্টা করবেন। আর টাকা না দিলে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে সিজার করাতে হবে। এসময় তাদের সাথে থাকা ম্যাটস ছাত্র নাঈম ওই নারীর লজ্জাস্থানের ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। শাশুড়ি নয়ন প্রতিবাদ করলে নাঈম বলে এ ভিডিও আমাদের ট্রেনিংয়ের জন্য লাগবে। নিরুপায় হয়ে শাশুড়ি নয়ন গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. লাইনুর নাহারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি হাসপাতালে আসেননি।
অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, হাসপাতালে ওইসময় সিনিয়র চিকিৎসক নার্স চার্জে থাকা সত্ত্বেও গৃহবধূকে আয়া ও ম্যাটসের ছাত্র দিয়ে সন্তান প্রসব করানো হয়। ওই সময় তারা নবজাতকের ঘাড় ধরে জোরপূর্বক টেনে বের করানোর কারণে নবজাতকের মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কালো হয়ে রক্ত জমাট বেধে যায়। টানা হেঁচড়ার কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে জীবিত নবজাতক প্রসব হওয়ার মাত্র ২-৩ মিনিটের মধ্যে মারা যায়।
মামলার বাদী ও হাজীপুর ইউপির সংরক্ষিত মহিলা সদস্য তাহের বেগম নয়ন বলেন, নবজাতকের মরদেহ নিয়ে বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। পরদিন ২২ অক্টোবর এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে হাসপাতালে গিয়েও আরএমও কে না পেয়ে ফিরে আসেন। এরপর দিন পুনরায় হাসপাতালে গিয়ে বিষয়টি জানালে তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর ভুক্তভোগীদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার পর দিন ২২অক্টোবর বৃহস্পতিবার হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুল আফসার, গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. হেমা সানজিদা ও নার্সিং সুপারেন্টেন্ড বেবী সুলতানাকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তবে মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) পর্যন্ত ওই তদন্ত কমিটি কোন লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সৈয়দ মো. আব্দুল আজিম বলেন, আদালতের আদেশ এখনো আমরা হাতে পায়নি, পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।