যমুনা ফার্টিলাইজার কারখানা মেয়াদোত্তীর্ণ নিম্নমানের সার বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ডিলাররা বলছেন, প্রতি ট্রাকে ভাল সারের সঙ্গে দুই মেট্রিক টন পর্যন্ত জমাট বাধা নিম্নমানের সার দেয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অকার্যকর এ সার কিনে প্রতারিত হচ্ছেন কৃষকরা আর লোকসানের মুখে পড়ছেন ডিলাররা। তবে, এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টাঙ্গাইলের বিসিআইসির তালিকাভুক্ত সার ডিলাররা প্রতিমাসে যমুনা ফার্টিলাইজার কারখানা থেকে ইউরিয়া সার কিনেন। কিন্তু ফার্টিলাইজার কর্তৃপক্ষ দেশে উৎপাদিত ইউরিয়া সারের সঙ্গে প্রতি ট্রাকে দুই থেকে তিন মেট্রিক টন আমদানি করা নিম্নমানের জমাট বাধা সার নিতে বাধ্য করছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার প্রত্যেক ডিলারের গোডাউনে শত শত বস্তা জমাট বাধা সার দীর্ঘদিন ধরে পড়েও আছে। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে ডিলারদের অভিযোগ।
একজন ডিলার জানান, তারা প্রতিটি ট্রাকে ১২ টন করে সার নিয়ে আসেন। সেখানে তাদের ৪ থেকে ৫ টন করে জমাট বাধা খুবই নিম্নমানের সার দিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে তাদের কিছুই করার নেই। কারণ, এটা যদি তারা না নেয় তাহলে তাদের সারই দেয়া হবে না। তাই তারা বাধ্য হয়েই নিয়ে থাকেন।
আরেকজনের অভিযোগ, সার কেনার সব কাগজপত্র করা হয আসল যমুনা সারের জন্য। সে হিসেবেই তারা টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু প্রতি ট্রাকে ২ টন করে নিম্নমানের সার তাদের চাপিয়ে দেয়া হয়।
প্রান্তিক কৃষকরা বলছেন, সার না পেয়ে বাধ্য হয়ে দীর্ঘ দিনের জমাট বাঁধা সার কিনলেও চাষাবাদে কোন কাজে আসছে না। এই সার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মাঠের কৃষকরা জানান, তারা এই জমাট বাঁধা সার বাসায় নিয়ে এসে ভেঙে গুড়া করে জমিতে দেন। কিন্তু এই সার ফলন বৃদ্ধিতে কোন কাজে আসছে না। নিরুপায় হয়েই তারা টাকা দিয়ে মানহীন সার কিনছেন।
জেলা সার ডিলার সমিতির সভাপতি কাজী সামছুল হকের অভিযোগ, জোর করে র্দীঘদিন খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা জমাট বাধা সার ডিলারদের চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে একদিকে ডিলাররা লোকসানে পড়ছে অন্যদিকে কৃষকরাও প্রতারিত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন জেলার কৃষি কর্মকর্তা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আহসানুল বাসার জানান, জমাট বাঁধা সারের চাহিদা কম, বাজার মূল্যও কম। মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। কৃষকরা এটা নিতে আগ্রহী না হলেও তারা নিরুপায়। তাই অবশ্যই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
জেলায় মোট ডিলার রয়েছেন ১৭৫ জন। টাঙ্গাইলে প্রতি বছর ইউরিয়া সারের চাহিদা ১ লাখ ২৯ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু পাওয়া যায় ৭৭ হাজার ৯৪ মেট্রিক টন।