ads
শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪৪ অপরাহ্ন

ডিজিটাল ব্যক্তিত্ব, ডিজিটাল জালিয়াতি

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ১৬ বার পঠিত

নাজমুস সাকেব নাঈম, পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস প্রোভাইডার ইজিপেওয়ে এবং হোটেল বুকিংবিষয়ক সফটওয়্যার পেখমের প্রতিষ্ঠাতা। থাইল্যান্ডের সিয়াম ইউনিভার্সিটির গেস্ট লেকচারার এবং নেপালের সিভিল ব্যাংকের একজন পরামর্শকও। ফেসবুক-কমার্স বা এফ-কমার্সের গ্রাহকসেবায় সহায়তার জন্য তিনি চ্যাট বট ‘দ্য জেড বয়’ উদ্ভাবন করে আলোচনায় আসেন। এ নিয়ে মার্কিন সাময়িকী ‘অনট্রাপ্রেনার’ ও ‘ফোর্বসে’ ২০১৭ সালে তার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। তিনি ই-কমার্স নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন সেমিনারে ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’ হিসেবে বক্তব্য দেন। অবিশ্বাস্য হলেও এই ব্যক্তিটিই কিনা ভিসা কার্ড জালিয়াতি করে পাপুয়া নিউগিনির একটি ব্যাংকের বাংলাদেশি গ্রাহকের সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে সাকেব ৯ দেশে লেনদেন করেন। অর্থ ট্রান্সফার এবং অনলাইনে কেনাকাটা করতে স্ত্রী-সন্তান, শাশুড়ি ও শ্যালিকাকে নিয়ে থাইল্যান্ডে প্রমোদভ্রমণেও যান তিনি। তাদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ালেও হোটেলে অবস্থান করে ৯ দেশে অনলাইনে লেনদেন করেছেন। অবিশ্বাস্য এই জালিয়াতি করেও তিনি ছয় বছর (২০১৪ থেকে ২০২০) ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এদিকে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াহেদ ৬ বছর ধরে পাপুয়া নিউগিনিসহ ৯ দেশে আইনের আশ্রয় নিয়েও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিটিকে চিহ্নিত করতে পারেননি। উল্টো ওই ব্যবসায়ীকে অভিযুক্ত করেছে পাপুয়া নিউগিনির ব্যাংক সাউথ প্যাসিফিক লিমিটেড। অবশেষে ২০১৯ সালের শেষের দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ মামলার তদন্ত শুরু করে। অবশেষে ২৫ আগস্ট মিরপুর ডিওএইচএস থেকে ইজিপেওয়ের প্রতিষ্ঠাতা নাজমুস সাকেব নাঈম ও তার সহযোগী মইনুল ইসলাম মামুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সাকেব আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন-অর রশীদ বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ডিজিটাল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নাজমুস সাকেব নাঈমের সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি পাপুয়া নিউগিনির একটি ব্যাংকের গ্রাহকের কার্ড জালিয়াতি করে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার কাছ থেকে জব্দ হওয়া ল্যাপটপ এবং তিনটি মেইলে জালিয়াতিসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

অভিযানের নেতৃত্বদানকারী তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের এডিসি হাফিজ আল ফারুক বলেন, এটি মূলত সিএনপি (কার্ড নন প্রেজেন্ট) প্রতারণা। অনলাইনে লেনদেনের সময় প্রতারক নিজের পরিচয় গোপন রেখে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ‘কন্টামিনেটেড লিংকের’ মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও অর্থসংক্রান্ত তথ্য চুরি করে এ ধরনের ঘটনা ঘটায়।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আব্দুল ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘দেশ বেশ এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ প্রতিষ্ঠানটি পাপুয়া নিউগিনিতে সুপার মার্কেট, সুপারশপ চেইন, ফাস্টফুড অ্যান্ড বেকারি, রেস্টুরেন্ট চেইন, ফিলিং স্টেশন, ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড লজিস্টিকস, কনটেইনার ইয়ার্ড, অ্যাপার্টমেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০০৭ সালে তিনি পাপুয়া নিউগিনির ব্যাংক সাউথ প্যাসিফিক লিমিটেডে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খুলে ‘ভিসা ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড’ গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে ব্যবসায়িক কাজে সিঙ্গাপুরে গিয়ে হোটেলে বিল পরিশোধ করতে গেলে তার কার্ড ‘রেস্ট্রিকটেড’ দেখায়। কয়েকবার চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন। পরে পাপুয়া নিউগিনিতে ফিরে ব্যাংকে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে জানানো হয়, প্রতারণামূলক বৈদেশিক লেনদেনের সন্দেহে তার ভিসা কার্ডটি ‘রেস্ট্রিকটেড’ করা হয়।

ভুক্তভোগী আব্দুল ওয়াহেদ জানান, ভিসা কার্ড জালিয়াতির ঘটনা জানতে পেরে ক্ষতিপূরণ দাবি করে পাপুয়া নিউগিনির ন্যাশনাল কোর্টে ব্যাংক অব সাউথ প্যাসিফিক লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ব্যাংক তার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে আত্মীয় বা কর্মচারীকে কার্ডের তথ্য পাচার করে ওয়াহেদ নিজেই অর্থ খরচ করেছে। খরচ করে ক্ষতিপূরণ দাবির পাশাপাশি ব্যাংকের সুনাম নষ্ট করেছেন তিনি। ক্ষতিপূরণ আদায়ের পাশাপাশি ব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণে আইনি লড়াই শুরু করেন ওয়াহেদ। আইনজীবীর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, হংকং, চীন ও থাইল্যান্ডে তার কার্ড থেকে এই প্রতারণামূলক বৈদেশিক লেনদেনের বিষয়ে আইনগত সহায়তা চান। দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ও শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীদের সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ করেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিপর্যস্ত আব্দুল ওয়াহেদ কোথাও ন্যায়বিচার না পেয়ে ২০১৯ সালে ডিসেম্বরে বাংলাদেশে এসে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন। পুলিশ অবশেষে নাজমুস সাকেব নাঈম ও তার সহযোগী মইনুল ইসলাম মামুনকে গ্রেপ্তার করে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নাজমুস সাকেব নাঈম ২০১৪ সালের ২১ জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত আব্দুল ওয়াহেদের ভিসা কার্ড ব্যবহার করে ৯ দেশে অনলাইনে কেনাকাটা এবং ভার্চুয়াল কার্ড ক্রয় করে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই সময়ে তিনি এক হাজার ৪৫২টি লেনদেন করেন। আব্দুল ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনির যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করেছিলেন প্রতারণামূলক বৈদেশিক লেনদেনের সত্ত্বেও ব্যাংকটি যথাসময়ে তাকে সতর্ক করতে ব্যর্থ হয়েছে। যখন তার কার্ডে ‘ট্রানজেকশন রেস্ট্রিকটেড’ করা হয়েছে, ততদিনে হ্যাকার প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, মামলার বিষয়টি পাপুয়া নিউগিনির ব্যাংক অব সাউথ প্যাসিফিক লিমিটেডের। এটি একটি আন্তর্জাতিক এবং এর সঙ্গে দেশের সম্মান জড়িত। এটিকে পুলিশ চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিল। নাজমুস সাকেব নাঈম নিজেকে ‘হাইড’ করতে বাংলাদেশ ছাড়াও বাইরের দেশে গিয়ে লেনদেন করেন। তবে প্রযুক্তিগত তদন্তের মাধ্যমে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অর্থ ট্রান্সফার করতে স্ত্রী-সন্তান, শাশুড়ি ও শ্যালিকাকে নিয়ে প্রমোদভ্রমণ: তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হ্যাক করা ভিসা কার্ডটি ব্যবহার করে প্রথম দিকে দেশীয় কিছু অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে প্ল্যাটফরমে ১৬টি দামি মোবাইল কেনেন সাকেব। পরে ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থাই এয়ারওয়েজে স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, শ্যালিকা ও শাশুড়িকে নিয়ে থাইল্যান্ডে যান। নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতে ২০১৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর থাই এয়ারওয়েজে বিজনেস ক্লাসে রিটার্ন টিকিটসহ ৬ জনের টিকিট কনফার্ম করে হ্যাককৃত ভিসা কার্ড দিয়ে। তবে সেই ফ্লাইটে ব্যাংককে যাননি তারা। সাকেব তার ‘এন্ট্রোপে’ অ্যাকাউন্টে ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড জেনারেট করে আব্দুল ওয়াহেদের ভিসা কার্ড থেকে ব্যালেন্স ট্রান্সফার করে। সেই ভার্চুয়াল কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে থাই এয়ারওয়েজের টিকিট কিনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ব্যাংকক যান। তার পরিবারের সদস্যরা বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থানের পাশাপাশি শপিং ও ঘোরাঘুরিতে ব্যস্ত থাকলেও তিনি হোটেল রুম থেকে বের হননি। হ্যাককৃত কার্ড ব্যবহার করে অনলাইন শপিংয়ে ব্যস্ত সময় কাটে তার।

অনলাইনে একদিনে ১০০টির বেশি লেনদেনও করেছে। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর হ্যাককৃত ভিসা কার্ড থেকে বিল পরিশোধের মাধ্যমে এমিরেটস এয়ারলাইনসে সপরিবারে ঢাকা থেকে দুবাই হয়ে ব্যাংককে যাওয়ার জন্য বিজনেস ক্লাস টিকিট কনফার্ম করলেও ভ্রমণ করেননি সাকেব বা তার পরিবারের কেউ। ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৮০ দিনে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডে অবস্থান করে সাকেব তার ‘এন্ট্রোপে অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে দুটি ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড (ব্যাংক অব ভেল্টেট্টা, মাল্টা) জেনারেট করে হ্যাককৃত ভিসা কার্ড থেকে বিল পরিশোধের মাধ্যমে ৬৯ বারে ৯৮ হাজার ৪৫৯ মার্কিন ডলার হাতিয়ে নেন। পাশাপাশি ২০১৪ সালের ২৮ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত নেটেলারইউকে অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড জেনারেট করে ৭ বারে ৯৮১.২৮ মার্কিন ডলার হাতিয়ে নেন। ২০১৪ সালের ২০ আগস্ট থেকে ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮টি চেকআউটের মাধ্যমে ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার ১২০ টাকা সাকেবের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়।

বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডে অবস্থান করে হ্যাককৃত ভিসা কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, হংকং, চীন ও থাইল্যান্ডে বিভিন্ন দামি সফটওয়্যার, অ্যাপলের ম্যাকবুক, আইফোন, রোলেক্স ঘড়ি, নামি ব্র্যান্ডের পারফিউম, ক্যামেরা, ওয়ালেট, কসমেটিকস কিনেন সাকেব।

সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

Prayer Time Table

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:২৪
  • ১২:১৬
  • ১৬:১১
  • ১৭:৫১
  • ১৯:০৬
  • ৬:৩৭
ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ওয়ালি উল্লাহ
নির্বাহী সম্পাদক
নিউজ রুম :০২-৯০৩১৬৯৮
মোবাইল: 01727535354, 01758-353660
ই-মেইল: editor@sristybarta.com
© Copyright 2023 - SristyBarta.com
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102