মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান বলেছেন, মসজিদ নির্মাণের সময় কোন অনুমতি নেয়া হয়নি।
মসজিদের ভবনটি বর্ধিত করার জন্য কলাম নির্মাণের সময়ে গ্যাসের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিতাস গ্যাসের গঠিত এই কমিটির প্রধান তিতাস গ্যাসের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিষয়ক জিএম ওয়াহাব তালুকদার আজ দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “ওই মসজিদের উত্তর দিকে ভবন বানানোর সময় চার নম্বর কলামটি রয়েছে সেটি বানানোর সময় যে ভিত তৈরি করা হয়েছে সেটি গ্যাস লাইনসহ রাস্তার ভেতরে আরও ছয় ইঞ্চি রয়েছে।”
“যখন তার ফাউন্ডেশন তৈরি করেছে তখন লাইনটা বিদ্যমান ছিল। আমাদের লাইনটা তারা উপরে রেখে লাইনের নিচ দিয়ে ফাউন্ডেশন তৈরি করেছে। সেটার করার সময় আমাদের পাইপলাইনের র্যাপিং নষ্ট করেছে। এর ফলে আমাদের গ্যাসের লাইন মাটির সংস্পর্শে এসে এতে ছিদ্র হয়েছে। সেই ছিদ্র থেকে গ্যাস বের হয়েছে।”
তিনি আরও বলেছেন, তদন্তের সময় মসজিদ কমিটির সভাপতির সাথে সাক্ষাতকারে তারা জানতে পেরেছেন যে এই মসজিদ নির্মাণের জন্য তাদের কাছে সিটি কর্পোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ, কিংবা রাজউক কারো কোন অনুমোদন নেই।
তাছাড়া মসজিদটিতে দুটি বিদ্যুতের লাইন রয়েছে, যার একটি অবৈধ বলে তিনি জানান।
“বিদ্যুৎ চলে গেলে তারা বিকল্প লাইনটি ব্যবহার করেন। এখানে যেটা ঘটেছে কারেন্ট যাওয়ার পরে তারা যখন (লাইন) বদল করেছে তখন স্পার্ক করে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের প্রাথমিক ধারণা।”
সেখানে তিতাস গ্যাসের পাইপলাইনটি ৯০-এর দশকে তৈরি বলে তিনি জানান। মসজিদের পাশে গ্যাসের লাইন সব মিলিয়ে ছয়টি লিক পাওয়া গেছে বলে তিনি জানান। সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে।
ওদিকে মসজিদটি তিন শতাংশ জমির উপর নির্মাণ করা হয় এবং পরে আরও তিন শতাংশ জমির উপর অবৈধভাবে এর ভবন সম্প্রসারণ করা হয় বলে আদালতকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
সেই অংশের নিচ দিয়েই তিতাস গ্যাসের সঞ্চালন লাইনের অবস্থিত ছিল।
বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে জনস্বার্থে করা একটি রিটের শুনানিতে বুধবার আদালতকে তিনি একথা বলেন।
এর আগে দুর্ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জের দমকল বাহিনীর উপ-পরিচালক বলেছিলেন, মসজিদের ভেতরে গ্যাস জমে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তারা সন্দেহ করছেন। এরপর তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ওঠে।
মসজিদটির মেঝের নিচে গ্যাস লাইন ফুটো হয়ে অনেক দিন ধরে গ্যাস বের হচ্ছিল এবং তা ঠিক করতে তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঘুষ চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগেরও তদন্ত করা হচ্ছে।
সোমবার থেকে মসজিদের পাশে তিতাস গ্যাসের কর্মীরা মাটি খুড়ে গ্যাসের লাইন পরীক্ষা করছে।
বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাস গ্যাস চারজন কর্মকর্তা এবং চারজন কর্মচারীকে ইতিমধ্যেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে বাইতুস সালাত মসজিদে এই বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮ জন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।