স্ত্রীর সামনে পরকীয়া প্রেমিকাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ টিলায় ফেলে দেন আফসার মিয়া ও তার স্ত্রী রিপা। হবিগঞ্জ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বুধবার ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন তারা।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন হবিগঞ্জের এসপি মোহাম্মদ উল্ল্যা।
এসপি মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, চলতি বছরের শুরুর দিকে একদিন ঘটনাক্রমে চুনারুঘাট উপজেলার পাচারগাঁও গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে আফসার মিয়া ওরফে কাওছারের স্ত্রী রিপা বেগমের সঙ্গে শুকলা এবং মিষ্টির পরিচয় হয়। থাকার জন্য মৌলভীবাজার শহরে ভাড়া বাসা খুঁজছিলেন তারা। পরে মিষ্টি ও শুকলাকে নিজের বাসায় সাবলেট থাকার প্রস্তাব দেন রিপা। প্রস্তাবে রাজি হয়ে শুকলা ও মিষ্টি মৌলভীবাজার শহরের চাঁদ মিয়ার ভাড়া বাসায় রিপার ফ্ল্যাটে উঠেন।
কিছুদিন পর শুকলা সেই বাসা ছেড়ে চলে যান। এরই মধ্যে রিপার স্বামী আফসার মিয়ার সঙ্গে মিষ্টির পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক হয়। এ নিয়ে স্বামী আফসার মিয়ার সঙ্গে রিপার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরে রিপা বাবার বাড়িতে চলে যান। ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রিপাকে ফোন করেন আফসার। তখন মিষ্টিকে মেরে ফেললে স্বামীর কাছে আসবেন বলে শর্ত দেন রিপা।
মোবাইলে হত্যার পরিকল্পনা করেন তারা। সে অনুযায়ী পরকীয়া প্রেমিকা মিষ্টিকে মৌলভীবাজার থেকে সঙ্গে নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজে আসেন আফসার। সেখানে স্বামীকে মোবাইলে রিপা বলেন, যদি তুমি মিষ্টিকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে পারো তাহলে আমি তোমার সংসার করবো। নয়তো কোনোদিন তোমার সংসারে ফিরে যাব না।
এ অবস্থায় মিষ্টিকে হত্যা করতে রাজি হন আফসার। পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন ব্রিজের ফুটপাত থেকে কাঁচি সংগ্রহ করেন আফসার। কাঁচি প্যান্টের পকেটে লুকিয়ে গাড়িতে করে আফসার, রিপা ও মিষ্টি নিজ বাড়িতে যান। খাওয়া-দাওয়া শেষে পুনরায় মৌলভীবাজার শহরের বাসায় যাওয়ার কথা বলে মিষ্টিকে চুনারুঘাট উপজেলার রানীগাঁও হাওরের টিলায় নিয়ে যান তারা। টিলায় স্ত্রী রিপার সহায়তায় মিষ্টিকে ধর্ষণ করেন আফসার। পরে স্বামী-স্ত্রী মিলে মিষ্টির গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কাঁচি দিয়ে মিষ্টির গলা কেটে দেন আফসার। মৃত্যু নিশ্চিত করে মিষ্টির মোবাইল ও ব্যাগ নিয়ে যান তারা। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে ৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
২০ দিন আগে মিষ্টির মামলার ঘটনাস্থলের পাশে ফারুক নামে এক ব্যক্তিকে ঢাকা থেকে এনে হত্যাচেষ্টা করা হয়। এই ঘটনার তদন্তকালে পুলিশ জানতে পারে পরিচয় গোপন করে কাওছার নামে এক ব্যক্তি হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পরে পুলিশ কাওছারের প্রকৃত পরিচয় জানতে পারে। পুলিশ তথ্য পায় কাওছারের প্রকৃত নাম আফসার। তিনি ঘটনার দিন রাতে স্ত্রী রিপা বেগমসহ একটি অপরিচিত মেয়েকে নিয়ে পাচারগাঁওয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। পরে কাওছারের মাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানান, ঘটনার দিন রাতে তার ছেলে আফসার, পুত্রবধূ ও এক মেয়েসহ বেড়াতে এসেছিল। পুলিশ ওই হত্যাকাণ্ডে আফসারের জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে গ্রেফতার করতে তৎপর হয়।
একপর্যায়ে এক মহিলা পুলিশ আফসারের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় শুরু করেন। প্রেমিক আফসার তার প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে এলে পুলিশের জালে ধরা পড়েন। পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন। ভিকটিমের নাম মিষ্টি বলে জানালেও তার প্রকৃত পরিচয় জানেন না বলে জানান। মেয়েটি মৌলভীবাজার শহরে একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন বলে জানান আফসার।