নাটোরে ভাবীর বড় বোনের সাথে সমকামিতায় জড়িয়ে প্রাণ হারাল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী কিশোরী সাদিয়া ইসলাম মৌ। স্কুলছাত্রী সাদিয়াকে হত্যার অভিযোগ এনে এলাকাবাসী ও সাদিয়ার স্বজনরা মানবন্ধনে বিচার দাবি করেছেন। তবে পুলিশ সাদিয়ার বাড়িতে গেলেও তার পরিবার মামলা দেয়নি।
এলাকাবাসী জানায়, নাটোর শহরের চৌধুরী বড়গাছা এলাকার রিকশা চালক আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে ও বড়গাছা বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌ। তার ভাবীর বড় বোন রুপা খাতুন ওরফে রূপ। রুপা নারী হলেও পুরুষ সেজে রূপ নাম দিয়ে টিকটকে ভিডিও আপ করে। আর পুরুষের রূপ ধরে রুপা কৌশলে সাদিয়াকে তার সাথে সমকামিতায় জড়িয়ে নেয়। তাদের সমকামিতায় এক পর্যায়ে ২১ আগস্ট পালিয়ে যায় তারা।
নিজেকে ধনীর সন্তান হিসেবে পরিচয় দিয়ে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিলাসী জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেয় সে। এছাড়া কখনও বাংলাদেশ জুটমিল করপোরেশন বিজেএমসি’র অফিসার হিসেবেও পরিচয় দিতো। তাতেও কোনো মেয়ে রাজি না হলে ওই তরুণী নিজের দুই হাত কেটে এবং বিষ খেয়ে প্রমাণ দিতো যে তিনি খাঁটি প্রেমিক।
আপাদমস্তক নারী হলেও চলনে, বলনে, পোশাকে সুদর্শন পুরুষ মনে হতো তাকে। অনেক মেয়েই তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে। একপর্যায়ে নারীত্বের বিষয়টা জানতে পেরে তাকে ছেড়েও গেছে। কিন্তু এরই মধ্যে ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে।
এভাবেই গত ২৪ আগস্ট সকালে রুপা সাদিয়াকে নিয়ে তার নিজ বাড়িতে আসে। ওই দিন রুপা ও সাদিয়াকে কেউ গ্যাস ট্যাবলেট (ইদুর মারা বিষ) খাইয়ে হত্যাচেষ্টা করে।
আহত অবস্থায় তাদের নাটোর সদর হাসপাতালে আনে রুপার পরিবারের সদস্যরা। সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে মারা যায় সাদিয়া। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় রুপা। ২৪ আগস্ট রাতে সাদিয়ার মৃত্যু হয়। আর অনেকটা গোপনেই ২৫ আগস্ট দাফন করা হয় সাদিয়ার লাশ। তবে সুস্থ হয়ে রুপা খাতুন আত্মগোপনে রয়েছে।
সাদিয়ার চাচাতো ভাই জনি ও আপন ভাই সনি অভিযোগ করেন, পরিবারের সদস্যরা সাদিয়াকে নির্যাতন ও গ্যাস ট্যাবলেট সেবন করে হত্যা করছে।
তবে রুপার বাবা রুবেল হোসেন উল্টো অভিযোগ করেন, সমকামিতার কারণে সাদিয়ার পরিবারের সদস্যরা দুইজনকে গ্যাস ট্যাবলেট সেবন করিয়েছে।
শনিবার (২৯ আগস্ট) এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাবাসী ও সাদিয়ার স্বজনরা সাদিয়াকে হত্যার অভিযোগ এনে দুপুরে কানাইখালী পুরাতন বাসট্যান্ডে মানববন্ধন করে। তারা ঘটনার বিচার দাবি করে।
মানববন্ধনের খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যায় সাদিয়ার বাড়িতে যান নাটোর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন। তিনি সাদিয়ার পরিবারকে মামলার জন্য বলেন। এ সময় সাদিয়ার মা সুফিয়া বেগম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মামলা করার সিদ্ধান্ত জানায়।
এ ব্যাপারে নাটোর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন বলেন, আর মামলা না করায় তাদের করার কিছু নেই।