ভারতীয় ভিএইচ (ভেংকিস) গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেছে দেশের ২৪টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। তাদের অভিযোগ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি পাওনা প্রায় ১৬ কোটি টাকা পরিশোধ না করে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার পায়তারা করছে।
বুধবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে যশোর প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভারতীয় ভিএইচ (ভেংকিস) গ্রুপ ২০১১ সালে যশোরে উত্তরা ফুডস এন্ড ফিডস নামে পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের দুটি কারখানা স্থাপন করে। এ কারখানার কাঁচামালের জন্য ভিএইচ গ্রুপের মালিক দেশের ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে। এরপর বিভিন্ন সময় ৭০টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কারখানা দুটিতে কাঁচামাল সরবরাহ করে আসছেন। পাঁচ বছর আগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে ওই ৭০টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৬ কোটি টাকা পাওনা হয়েছে। এরইমধ্যে কর্তৃপক্ষ টাকা পরিশোধ না করে উৎপাদন কমিয়ে আনতে শুরু করলে সরবরাহকারীও মালামাল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
একপর্যায়ে তিন বছর আগে কারাখানা দুটি বন্ধ করে ভারতীয় মালিকপক্ষ। এখন তারা প্রতিষ্ঠানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিক্রি করে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে।
ঢাকার তুর করপোরেশনের মালিক পল্লব সমীর কুদরতে খুদা ব্রেজনেভ বলেন, এই কোম্পানিটি যশোরে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা কাঁচামাল সরবরাহ করে আসছি। মালামাল দেয়ার এক মাসের মধ্যে আমাদের বিল পেমেন্ট করার কথা। কিন্তু গত তিন বছর ধরে আমাদের পাওনা পরিশোধ নিয়ে তারা গড়িমসি করছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে পোল্ট্রিশিল্প একটি ঈর্ষণীয় পর্যায়ে এসেছে। গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে দেশের এই সফল শিল্পে বিদেশি কোম্পানি এদেশে ব্যবসা করতে এসে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সর্বশান্ত করে দিয়েছে।
তিনি জানান, এই পাওনা আদায়ে তাদের সাথে বহু দেনবার করা হয়েছে। বিষয়টি যশোরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়েছে। কোম্পানি এই পাওনা পরিশোধে গত ১৫ মার্চ কিছু ছাড়ের বিনিময়ে শোধ করার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু তা করা হয়নি। এরপর জুন মাসে পরিশোধের সময় নেয়; কিন্তু প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।
বগুড়ার সততা ট্রেডার্সের মালিক একেএম আসাদুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন জেলার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের কাঁচামাল সয়াবিন, ভুট্টা, ফিস অয়েল, আটা, ময়দা ইত্যাদি সরবরাহ করেছি। আমি নিজে তাদের কাছে ৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা পাব। এখন ব্যাংকসহ বিভিন্ন পাওনাদারদের কারণে বাড়িতে থাকায় দায় হয়ে পড়েছে। আমরা ওই টাকার জন্যে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি। অথচ, ভিএইচ গ্রুপ বিশ্বের প্রায় ৪৪টি দেশে এই ফিডের ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করছে। কিন্তু তাদের কাছে পাওনা টাকা পেতে বারবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মিলছে না।
তিনি আরও বলেন, এ অবস্থায় দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছেন কাঁচামাল সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা। যে কারণে পাওনা টাকা ফেরত পেতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি আমরা।
টাকা বকেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে উত্তরা ফুডস অ্যান্ড ফিডসের অডিটর সন্দীপ তাভানি বলেন, গত মার্চ মাসে তাদের সমুদয় পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সেটি দেরি হয়ে গেছে। মালিকপক্ষ অবশ্যই টাকা পরিশোধ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা ছাড়াও বিএস অ্যাগ্রোর আশরাফুল আলম, পিকে এন্টারপ্রাইজের দিপা রাণী নাথ, ইয়ন গ্রুপের ফরিদুজ্জামান, ইনোভেট বিডির কাজল দত্তসহ বিভিন্ন জেলার ২৪টি প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় ভিএইচ গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যারা পোল্ট্রি ও ফিস ফিড উৎপাদন করে বাজারজাত করে।