অবিরাম বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় নানা প্রজাতির সবজি ও ধানের বীজতলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নদীর পানি কমতে শুরু করার সাথে সাথে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। বিভিন্ন প্রজাতির সবজি গাছের শিকড় পচে যাওয়ায় রোদ ওঠার সাথে সাথে ঢলে পড়ছে গাছগুলো।
এছাড়া জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আমনের বীজতলা নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৫২ হাজার ৩০৯ হেক্টর জমিতে আউশ ধান, রোপা আমন ধান, বিভিন্ন সবজি, পান, আখ ও মরিচ রয়েছে। অবিরাম বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় এর মধ্যে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৬৯৭ হেক্টর আমনের বীজতলা রয়েছে। যার ফলে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এবারের জোয়ারে ২৫ হাজার ৩৬৮ জন চাষির ১৭ কোটি ১৮ লাখ ৯২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানেও বাগেরহাটের চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। আম্পানের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই কোন আগাম সতর্কবার্তা ছাড়া এমন ধাক্কা কৃষকদের মারাত্মক বিপদগ্রস্ত করেছে।
কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের শেখ রুস্তম আলী বলেন, ঘের ও ভিটায় থাকা শসা, মরিচ, টমেটো গাছের গোড়ায় কয়েকদিন ধরে পানি জমে রয়েছে। এখন পানি সরার পরে রোদ ওঠার সাথে সাথে গাছগুলো ঢলে পড়ছে। এ গাছ আস্তে আস্তে মারা যাবে। সব পানি নেমে গেলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আবারও নতুন করে জমি প্রস্তুত করে চাষাবাদ শুরু করতে হবে। যা আমাদের জন্য অনেক ব্যয়বহুল হবে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার অশোকনগর গ্রামের তারক বরাল বলেন, পানিতে ঘেরের মাছ ভেসে গেছে তো আগেই। আর এখন চোখের সামনে সবজি গাছগুলো ঢলে পড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কিভাবে নতুন করে আবারও চাষাবাদ শুরু করব জানিনা।তবে শুনেছি সরকার নাকি করোনা ও আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য প্রণোদনা দিয়েছেন। আমরা যদি প্রণোদনা বা সহজ শর্তে সরকারি ঋণ পেতাম তাহলে মোটামুটি খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারতাম।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, বাগেরহাটের ৫২ হাজার ৩‘শ ৯ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে জোয়ারের পানিতে ৯ হাজার ৫‘শ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এতে ১৭ কোটি ১৮ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমনের যে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রায় কোন প্রভাব পড়বে না। কারণ আমনের জন্য প্রায় ৩৩ শতাংশ বেশি বীজতলায় বীজ বোনা ছিল। যা দিয়ে আমনের বীজের (চারা)ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। এছাড়া আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বীজ, সার ও সব ধরণের কারিগরি সহায়তা দিয়ে সহযোগিতা করছি। সরকারি প্রণোদনা যাতে কৃষকরা সঠিকভাবে পায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে আমরা যোগাযোগ রক্ষা করব।