বাঙালির আত্মপরিচয়ের সশস্ত্র যুদ্ধের শুরু একাত্তরের ২৬শে মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস।
২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন বাঙালির মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখনকার ইপিআরের বেতার বার্তার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় সে ঘোষণা। দূরদর্শী বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের পুরো প্রস্তুতি নিশ্চিত করেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে জানান তাঁর রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা।
শান্তিপূর্ণ পথে দাবি আদায় না হলে কিভাবে তা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে তা অর্জন করতে হয় সেটা ভালভাবেই জানতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
২৫ শে মার্চ ১৯৭১। সেদিন রাতেই শুরু হয় পাকিস্তানীদের নির্মমতা।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের রচয়িতা ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু পহেলা মার্চ থেকে শুরু করে ২৫ মার্চ পর্যন্ত উনিই সরকার চালিয়েছেন। পশ্চিম পাকিস্তানকে সম্পুর্নভাবে বাংলা পূর্ব বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। পূর্ব বাংলা স্বাধীন হয়ে গেছে মার্চ মাসেই রকম একটা খবর ছড়িয়ে গেছে।
মধ্যরাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। অপারেশন সার্চ লাইটের নামে শুরু করে গণহত্যা। ঠিক তখনই স্বাধীনতার ঘোষণা সুষ্পষ্ট দিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
২৫শে মার্চ দিবাগত রাত ১২টা এক মিনিটে অর্থাৎ ২৬শে মার্চের জিরো আওয়ারেই স্বাধীনতার বার্তা দিলেন মহান এই নেতা। তখনকার ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে তা পৌঁছে যায় চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায়।
তৎকালীন ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ঘটনাটি যখন ড্রাফট করা হয় তখন আমরা উপস্থিত ছিলাম। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার বার্তা পাঠিয়েছিলেন চট্টগ্রামের হান্নান সাহেবের কাছে। তখনও আমরা তার কাছে উপস্থিত ছিলাম। আমরা ভাষনটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলাম।
ইংরেজিতে পাঠানো এক বার্তায় বঙ্গবন্ধু জানান, ইহাই হয়ত আমার শেষ বার্তা। আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে খানে আছো যাহার যা কিছু আছে তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও। সর্শক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।
মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সংগ্রামী কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর সহধর্মিনী রোকেয়া চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু কমান্ডার মানিক সাহেবের কাছেই দলিলটা পাঠিয়েছিলেন। সেখানেই নির্দেশনা দেয়া ছিল যে আমি ঘোষণা না দিতে পারলেও তোমাদের যা কিছু তা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ো।
সে বার্তা পাঠিয়ে দেয়ার পর সে রাতেই পাকিস্তানি বাহিনী আটক করে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে।
বঙ্গবন্ধুর সেই স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামে ছড়িয়ে দেন সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান। স্থানীয় বেতার কেন্দ্র থেকেও পাঠ করা হয় সে ঘোষণা। স্বাধীনতার এ ঘোষণার মধ্য দিয়েই শুরু হয় নয় মাসের রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধ। ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হয় ১৯৭১ এর ১০ই এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে।