চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আল-জামিয়াতুল আরাবিয়া নছিরুল ইসলাম মাদ্রাসায় (নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা) মুহতামিম পদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী।
মাদ্রাসার পরিচালক পদ নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসন ও সরকারের অবস্থান নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি।
রোববার দুপুরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ নজিবুল বশর বলেন, পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আগামী ২৮ অক্টোবর মাদ্রাসা পরিচালনার সর্বোচ্চ পরিষদ শূরা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে শীর্ষ আলেমরা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাদ্রাসার পরিচালক নিয়োগসহ পরবর্তী সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে আমাদের সরকার ও প্রশাসন সহযোগিতা করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব নিয়ে শূরা কমিটির বৈঠক আয়োজনে যা করা প্রয়োজন তা করতে বলেছেন। শূরা কমিটির বৈঠকে আগত সকল ওলামায়ে কেরামদের প্রশাসন নিরাপত্তা দেবে। বৈঠকে কেউ যদি কোন গোলযোগ সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে শূরা কমিটির প্রধান আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সায়েদুল আরেফিন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়ব উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, শনিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে আগামী ২৮ অক্টোবর ডাকা শূরা কমিটির বৈঠক এবং মাদ্রাসার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে এলাকাবাসী ও ছাত্র-শিক্ষকদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন আল্লামা শফী কর্তৃক নিযুক্ত মাদ্রাসার বর্তমান মুহতামিম মাওলানা সলিমুল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন উপস্থিত ছাত্রদের একাংশ ‘শূরা চাই, শূরা চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। এতে দুইপক্ষের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ঘটনাস্থলে ইটসহ বিভিন্ন কিছু ছুড়ে মারে। পরে উপস্থিত পুলিশ উভয়পক্ষকে নিবৃত করতে সক্ষম হন।
মাদ্রাসা মাঠে, বারান্দায় দু’পক্ষই আহুত শূরা সভার পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল করে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়।
সন্ধ্যার পর মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে সেখানে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী।
এ সময় ছাত্রদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এবং আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেবকে মুরব্বি মেনেছি। তারা যেদিন শূরা বৈঠক বসাবেন আমি প্রশাসনিক নিরাপত্তা দিয়ে তা সম্পন্ন করার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করব ইনশাআল্লাহ।
নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, আমি আগেই বলেছি- আল্লামা শফীর পর জুনায়েদ বাবুনগরীর কোনো বিকল্প নেই। সমগ্র বাংলাদেশ, সব কওমি মাদ্রাসা তার পেছনে কাতারবন্দি হয়ে গেছে।
এ সময় বাবুনগরী পরিবারের সঙ্গে নিজের স্মৃতিচারণা করে মাজারপন্থী হিসেবে পরিচিত এ সংসদ সদস্য বলেন, আপনারা মনে হয় গোপন তথ্য জানেন না, আল্লামা মুহিব্বুলাহ বাবুনগরী আমার প্রাণ।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেবসহ উনারা আমার জন্য ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন করেছিলেন। তখন জুনায়েদ সাহেব বাবুনগর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। আমি তখন থেকে উনারদের মধ্যেই আছি। আপনারা টের পাননি, আমি অপেক্ষা করছি, সময় হইছে, আমি বের হয়ে আসছি। জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব।
এরপর নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী নিজেই নারায়ে তাকবির বলে স্লোগান দেন।
এদিকে নাজিরহাট মাদ্রাসার চলমান অস্থিরতার পেছনে হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেছেন আল্লামা শফী কর্তৃক নিযুক্ত মাদ্রাসার বর্তমান মুহতামিম মাওলানা সলিমুল্লাহ।
তিনি বলেন, সাবেক মুহতামিম আল্লামা ইদরিসের মৃত্যুর দিন জুনায়েদ বাবুনগরী ছলচাতুরি করে মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমীকে শূরার অনুমোদন ছাড়াই মুহতামিম করতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি অনেককে জোরও করেছেন, কিন্তু আল্লামা শফী জীবিত থাকাকালীন আমাকে শূরা সদস্যদের মিটিংয়ের মাধ্যমে মুহতামিম বানিয়েছিলেন।
এ ঘটনার পেছনে জুনায়েদ বাবুনগরীর সুস্পষ্ট ইন্ধন রয়েছে অভিযোগ করে মাওলানা সলিমুল্লাহ বলেন, যারা সংবাদ সম্মেলনে হাতাহাতি করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চেয়েছে তাদের অধিকাংশ ইফতা বিভাগের ছাত্র যারা হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে এ বছর ভর্তি হয়েছে। তাদের সঙ্গে জুনায়েদ বাবুনগরীর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুন নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা শাহ মুহাম্মদ ইদ্রিস ইন্তেকাল করলে ওই পদটি শূন্য হয়।
পরবর্তীতে মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লি হিসেবে হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক মুহতামিম আল্লামা আহমদ শফী মাওলানা সলিমুল্লাহকে ওই মাদ্রাসার মুহতামিম ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আরেক শূরা সদস্য হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী মুফতি হাবিবুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব দেন।
বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে নাজিরহাট মাদ্রাসা ও এলাকায় অস্থিরতা বিরাজ করছে।