বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবীদের তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা চলাকালে ভাংচুরের ঘটনায় ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ২৪ জনকে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর এই ঘটনায় প্রায় ১ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে বলে তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন।
আজ রোববার (২০ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম এ আদেশ দেন। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর তিনটি থানায় পাঁচটি মামলা করা হয়েছে।
ঢাকার অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন বলেন, রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা পৃথক পৃথক মামলায় ৪৯ জনকে হাজির করেন। তদন্ত কর্মকর্তারা তিন দিন করে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক ২৪ জনকে একদিন করে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন। অন্যদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ গণমাধ্যমকে বলেন, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে ভাংচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় ১৬ জনকে নামধারী এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৫০০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
নিউমার্কেট থানার ডিউটি অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বার কাউন্সিল পরীক্ষায় ভাংচুরের ঘটনায় বিসিএসআইআর স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি এবং পুলিশ বাদী হয়ে দুটিসহ মোট তিনটি মামলা দায়ের করে। এ ঘটনায় মোট ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
সূত্রাপুর থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেন, বার কাউন্সিল পরীক্ষার ঘটনায় একটি ভাংচুরের মামলা করা হয়েছে। মামলায় কতজনকে আসামি করা হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি বলতে পারেননি। তবে এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার সকাল ৯টা থেকে ঢাকার ৯টি কেন্দ্রে প্রায় ১৩ হাজার পরীক্ষার্থী আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পরীক্ষার্থীরা। অনেকে পরীক্ষা বর্জন করে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যান। শিক্ষার্থীদের দাবি, এবারের প্রশ্নপত্র অনেক ‘কঠিন’ হয়েছে। পাশাপাশি পরীক্ষায় সিলেবাসের বাইর থেকে প্রশ্ন এসেছে। এতে ১০ শতাংশ পরীক্ষার্থীও পাস করবে না। এসব অভিযোগে পুরান ঢাকার মহানগর মহিলা কলেজ কেন্দ্র, মোহাম্মদপুর সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ ও বিসিএসআইআর হাইস্কুলে ভাঙচুর চালানো হয়।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবীদের সনদ পেতে নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। আবার ওই তিন ধাপের যেকোনো একটি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা একবার উত্তীর্ণ হলে পরবর্তী পরীক্ষায় তারা দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো অংশগ্রহণের সুযোগ পান। তবে দ্বিতীয়বারেও অনুত্তীর্ণ হলে তাদের পুনরায় শুরু থেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
সে অনুসারে ২০১৭ সালের ৩৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে লিখিত পরীক্ষায় দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো বাদ পড়া তিন হাজার ৫৯০ জন শিক্ষার্থী এবং ২০২০ সালে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবীর মধ্যে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আট হাজার ৭৬৪ শিক্ষার্থী মোট ১২ হাজার ৮৫৮ জন সনদপ্রত্যাশী এবার লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন।