পুরো নাম আতিকুর রহমান খান। বয়স প্রায় ৬০ বছর। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন ঢাকা-বান্দুরা আন্তঃসড়কের যানবাহন চলাচল। নিজের এবং পরিবারের কথা চিন্তা না করে বয়সের শেষ সময়ে যানজট নিরসনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন আতিকুর রহমান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যাটারিচালিত গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং সরু সেতু হওয়ায়, বর্তমানে বান্দুরা ব্রিজের ঢালে প্রতিনিয়তই যানজট লেগেই থাকে। একা মানুষ অন্যদিকে বয়সের ভার, সব মিলিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও মানুষ যাতে অল্প সময়ে বাড়িতে ফিরতে পারেন সর্বদা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন এই সেচ্ছাসেবী ট্রাফিক।
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে সেচ্ছায় কাজ করে যাওয়া এই সেচ্ছাসেবী ট্রাফিক আতিক বলেন, আমি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এখানে কাজ করি। বয়স হয়েছে তাই আগের মত আর পরিশ্রম করতে পারি না। শুধু মাত্র বড় ট্রাক কিংবা প্রাইভেট কার থেকেই মাঝে মাঝে কিছু বকসিস পাই।
তিনি আরোও জানান, আমি এখানকার স্থানীয় না। তাই কাজ শেষ করে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান চলে যাই।
জানা যায়, ৮০ দশকের দিকে এই ট্রাফিকের কাজে লিপ্ত হন আতিক। শুরুতে মরিচা ব্রিজের ঢালে বাসের লাইন ম্যানের কাজ করতেন তিনি। পরে মরিচা হতে বান্দুরায় চলে আসেন। তখন বান্দুরা টু জিনজিরা নবাবগঞ্জ বহর নামে বাস চলাচল করত। মূলত এই বাসের যানজট নিরসনেই কাজ করতেন তিনি। পরবর্তীতে বান্দুরা ব্রিজ নির্মাণের পর, ব্রিজের ঢালে যানজট নিরসনে বিনা পয়সায় স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক হয়ে এখন পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
আতিকের নিজ বাড়ি সিরাজদিখান উপজেলার গিরিনগরে গিয়ে দেখা যায়, অসুস্থ থাকায় সেদিন কাজে আসতে পারেননি। বয়সের ভার অন্যদিকে নানা রোগ থাকায় এখন তিনি বেশিরভাগ সমই অসুস্থ থাকেন। ভাঙ্গা দুটি টিনের ঘর, এক ছেলে, নাতি, ছেলের বউ এবং স্ত্রী নিয়ে থাকেন তিনি। ছেলে নাজমুল ভাড়ায় সিনএজি চালায়। দিন শেষে জমা খরচ দিয়ে যা থাকে তাই দিয়ে কোনমতে সংসার চলে তাদের। মাঝে মধ্যে ইনকাম না হলে বাড়িতে তাদের চুলাও জ্বলে না। হয়তো সেই দিনটি না খেয়েই পার করতে হয় আতিক ও আতিকের পরিবারের। কিন্তু তার পরেও কোনো আফসোস নেই আতিকের স্ত্রীর।
আতিকের স্ত্রী নাসিমা জানান, আমার বিয়ের আগে থেকেই তিনি এসব কাজ করেন। কিন্তু তাকে কখনো বাধা দেয়নি। কিন্তু আমি আর পারছি না। তাই শেষ বয়সে আমার স্বামীর জন্য সরকারের কাছে একটু সুব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।
আতিকের প্রতিবেশী মো. শহিদ বলেন, আতিক ভাইকে দীর্ঘদীন ধরে আমি চিনি। আমিও এক সময় যমুনা পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। তখন থেকেই তাকে রাস্তায় কাজ করতে দেখতাম। সরকারের পক্ষ হতে তাকে যদি একটা কর্মস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, অন্তত শেষ বয়সে একটু ভালভাবে পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারবেন তিনি।
যমুনা গাড়ির মালিক চন্দন বাবু জানান, আমরা মালিক পক্ষ হতে তাকে সহায়তা করতে চাই। কিন্তু আমাদের সহায়তায় তো তার পেট বাঁচবে না। তাই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদিন আহমেদ ঝিলু জানান, বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিনা পয়সায় কাজ করে যাওয়া এই স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক এবং তার পরিবার যেন ভালভাবে চলতে পারেন সেই ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে।
স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক আতিকের ব্যাপারে দোহার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম বলেন, বান্দুরাতে কে সেচ্ছাসেবী ট্রাফিক হিসেবে কাজ করছেন সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে খোঁজ নিয়ে আমরা তাকে সর্বাত্মক সহায়তার করার চেষ্টা করবো।