নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিকে বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। ঘটনার কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর জানা গেছে মসজিদে ছয়টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি। লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস এবং বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে বের হওয়া আগুনেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
সর্বশেষ পাওয়া সংবাদে জানা গেছে, মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাস গ্যাসের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে মসজিদে বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা সংগঠিত হওয়ার অভিযোগে এই ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) তাদের বরখাস্তের সঙ্গে সঙ্গে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়।
এদিকে মসজিদে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতায় গণশুনানীতে ১৭জন প্রত্যক্ষদর্শী অংশগ্রহণ করেছেন। তারা সেদিনের ঘটনার বর্ণনা সহ বিভিন্ন বিষয়ে জানিয়েছেন। সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন ওই তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি।
তিনি বলেন, ‘১টা থেকে লোকজন আসতে শুরু করে। বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত ১৭জন গণশুনানীতে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও যারা আসবে তাদের প্রত্যেকেরই কথা আমরা শুনবো। তারা মূলত ঘটনার বর্ণনা সহ বিভিন্ন বিষয়ে জানিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে এগুলো বলা যাচ্ছে না। একদিনের জন্যই এ গণশুনানীর আয়োজন করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘তদন্তের অগ্রগতি আছে। তবে এখনও আমরা কিছুই বলতে পারছি না। বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন তারা রিপোর্ট দেওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে। এছাড়াও আমরা এলাকাবাসী, মসজিদ কমিটির সঙ্গেও কথা বলেছি। তারপরও যারা সেখানে কথা বলতে চাইনি কিংবা কেউ স্বেচ্ছায় কিছু জানাতে চায় তাদের জন্য এ গণশুনানীর ব্যবস্থা করা হয়। যাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর কেউ না বলতে পারে আমাকে কথা বলতে দেয়া হয়নি। কিন্তু ঘটনায় অনেকেই মারা গেছেন। যারাও বেঁচে আছেন তারা গুরুত্ব অবস্থায় আইসিইউতে। দুইএকজন সুস্থ হলে আমরা তাদের সঙ্গেও কথা বলবো। তারপর আমরা প্রতিবেদন জমা দিবো। আমরা সবার কথা শুনছি। নির্দিষ্ট সময়েই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
এর আগে রোববার রাতে গণশুনানীর বিষয়ে ঘোষণা করা হয়। এর প্রেক্ষিতে সোমবার সকাল ১০টা থেকে গণশুনানী শুরু হয়। কিন্তু সরেজমিনে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেউ গণশুনানীতে অংশগ্রহণ করেননি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে ৩৭জন দগ্ধ হয়। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে এখনও অন্যদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ ঘটনায় শনিবার সকালে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা বিবিকে প্রধান করে ৫সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন।