মৃতপ্রায় রেলকে পুনরুজ্জীবিত করতে প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন রেলপথ মন্ত্রী এ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি জানান, আগামী ১৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় চিলাহাটি-হলদীবাড়ি রুটে মালবাহী ট্রেন চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই রুটের উদ্বোধন করবেন তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে (১০ ডিসেম্বর) নীলফামারী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আন্তর্জাতিক এই রুটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিমূলক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা জানান রেলপথ মন্ত্রী এ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন। আগামী বছরের ২৬ মার্চ একই রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
প্রস্তুতিমূলক এই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী। এতে নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার, নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীম, নীলফামারী-১ আসনের প্রাক্তন সংসদ সদস্য নুর কুতুবুল আলম চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আতিকুর রহমান, রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ, চিলাহাটি-হলদীবাড়ি রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহিম, নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মন্ত্রী জানান, শুধু চিলাহাটি-হলদীবাড়ি নয় দর্শনা, বেনাপোল, রহমানপুর, বিরল ও রাধিকাপুর রুট দিয়েও ভারতে ট্রেন চলাচলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে।
তিনি বলেন, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে বঙ্গবন্ধু রেলসেতু গত ২৯ নভেম্বর উদ্বোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের আগেই এটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে। এর ফলে রেলসেবার সম্প্রসারণ এবং সাধারণ মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন আরও সহজে। এই সেতুর উপর দিয়ে মিটার গেজ লাইনে ১০০কিলোমিটার বেগে ও ব্রডগেজ লাইনে ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
রেলপথ মন্ত্রী বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় চিলাহাটি-হলদীবাড়ি রুটে ট্রেন চলাচল। পরিত্যক্ত ছিল এতদিন। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই পথে আবারও ট্রেন চলাচল সম্ভব হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত রেলকে বেসরকারিকরণের সব প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। রেলকে ধ্বংস করেছে। মৃতপ্রায় রেলকে পুনরুজ্জীবিত করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জেলায় জেলায় রেলসংযোগ হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ১৯৯১-১৯৯২ সালে একযোগে ১০-১২ হাজার শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়ে বিদায় করে দেয়া হয়েছিল। রেলের ৬৮ হাজার জনবলের মধ্যে নেমে এসেছে ২৫ হাজারে। সৈয়দপুর রেলকারখানায় ১০ হাজার শ্রমিক ছিল আর এখন ১৪০০ এ নেমে এসেছে।
জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, বাংলাদেশ থেকে ভারতের জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত সাত কিলোমিটার এবং ভারতের হলদীবাড়ি থেকে বাংলাদেশের জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত ভারত তিন কিলোমিটার নতুন করে রেলপথ নির্মাণ করেছে।
নতুন এই রুট ঘিরে চিলাহাটি রেলস্টেশনকে আধুনিক মানসম্মত হাইটেক পার্ক আদলে নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। উদ্বোধনী দিনে এক হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখার জন্য রাখা হবে প্রজেক্টর।