মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন এক অসহায় মা। কিন্তু মামলা না নিয়ে উল্টো মাকেই হাজতে ঢোকানোর হুমকি দিয়েছেন রাজশাহীর চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমিত কুমার কুন্ডু।
চারঘাট উপজেলার তাতারপুর গ্রামের পারুল বেগম এমন অভিযোগ এনে বুধবার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও রাজশাহীর পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ১৫ বছর আগে চারঘাট উপজেলার তাতারপুর এলাকার মোস্তফা-পারুল দম্পতি তাদের মেয়ে আরিফাকে একই এলাকার আকবর আলীর ছেলে শাহাবুল ওরফে সবরের বিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকেই আরিফার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন স্বামী শাহাবুল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ আগস্ট সকালে আরিফা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে শাহাবুল দাবি করেন। খবর পেয়ে চারঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আরিফার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিনই দুপুর আড়াইটার দিকে আরিফার লাশ তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তড়িঘড়ি করে বিকেল ৫টার মধ্যেই লাশ দাফন করা হয়।
মৃত আরিফার মা পারুল বেগম অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই শাহাবুল, তাঁর বাবা আকবর, তাঁর দুই ভাই ও বোন মিলে আরিফার ঝুলন্ত লাশ নামিয়েছেন। খবর পেয়ে আমি আমার মেয়েকে দেখতে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। এরপর দেখতে পাই, আমার মেয়ের শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন: বুকে, নাকে এবং কানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে। এতে আমার ধারণা, আমার মেয়েকে তারা নির্যাতন করে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছে অথবা তারা নিজেরাই হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছিল।
পারুল বেগম আরো বলেন, ‘আমার মেয়ে জামাই শাহাবুল এলাকার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও ভয়ংকর প্রকৃতির মানুষ। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই তাকে শারীরিক নির্যাতনসহ মাদক দিয়ে পুলিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া এলাকায় আধিপত্য রয়েছে তার। তার নামে ওয়ারেন্ট থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে না।
পারুল বেগম আরো বলেন, ‘আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে এই কথা বলায় শাহাবুল তার অন্যান্য সহযোগী আবুল, মাজেদুল, কালাম, কফিল, মিলন, ইউনুস ও মকসেদুলকে নিয়ে আমার বাড়িতে গিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। ওই সময় আমি ঘরের ভেতর থেকে দরজা আটকে প্রাণে রক্ষা পাই। পরে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।’
‘আমার মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় আমি চারঘাট থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানার ওসি আমাকে বলেন, আপনার মেয়ে মারা গেছে আপনার তো গড়াগড়ি করার কথা। আপনি থানায় অভিযোগ করতে এসেছেন কেন? এরপর ওসি মামলা না নিয়ে আমাকে থানা হাজতে ঢোকানোর হুমকি দেন। এ অবস্থায় আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বর্তমানে রাজশাহী শহরে নিকট আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছি।’ অভিযোগ করে পারুল বেগম ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্ত শাহাবুলসহ জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পারুল বেগমের মামলা না নেওয়া এবং মাদক ব্যবসায়ী শাহাবুলের বিষয়ে জানতে চাইলে চারঘাট থানার ওসি সমিত কুমার কুণ্ড বলেন, ‘ওই নারীকে হাজতে ঢোকানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে শাহাবুল মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমি এখনও অভিযোগ দেখিনি। দেখার পরে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া পারুল বেগমের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।’