মোংলায় খোনকারের বেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে দোকান নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সহায়তায় দোকানপাট নির্মাণসহ মাঠটি ধীরে ধীরে দখলে নিচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। করোনাকালীন সময় স্কুল বন্ধ থাকায় এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে এসব দখলবাজরা। দোকান নির্মাণের কারণে বিদ্যালয়টির মাঠ সংকীর্ণ হয়ে গেছে, ফলে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা করতে সমস্যায় পড়তে হবে। প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সদস্যদের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
জানা যায়, মোংলা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী খানজাহান আলী বাজারসংলগ্ন খোনকারের বেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অবস্থিত। বর্তমানে স্কুলটির খেলার মাঠ দখল করে দোকান ঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কনক প্রসাদ রায় ও সভাপতি আলামিন শেখের বিরুদ্ধে। স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থী এর প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছে অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার হচ্ছে না এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় তারও সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলেও অভিযোগ অনেকের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৭ সালের তৈরি পুরানো এ বিদ্যালয়ের সামনে মনোরম পরিবেশে সুন্দর একটি খেলার মাঠ রয়েছে। মাঠের দক্ষিণ পাশ দিয়ে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতের জন্য একটি সড়কও রয়েছে। এ সড়কের পাশেই স্কুলের জায়গায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা খেলার মাঠ দখলে নিয়ে দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেয়ার কারণে লোকজনের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। করোনার কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্কুলের শিক্ষার্থীরা দোকান ঘর নির্মাণে বাধা প্রদান করতে পারছে না। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর নানা অভিযোগ। তিনি আগেই বিদ্যালয়-কাম-সাইক্লোন শেল্টারের পিছন থেকে দুটি ঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ দখল করে দোকান ঘর তৈরি করার ফলে স্কুলের মাঠও বিনষ্ট হচ্ছে। এতে শিশুদের বিনোদনে বিঘ্ন ঘটবে। তারা আরও বলেন, সাইকোন শেল্টার মানুষের দুর্যোগের আশ্রয়স্থল। স্কুলের সামনে দোকান ঘর তৈরি হলে দুর্যোগের সময় উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ সেখানে আশ্রয়ের জন্য যেতেও সমস্যায় পড়তে হবে। এসব বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে জিজ্ঞেস করলেও তিনি কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমরা এলাকাবাসী এসব অনিয়ম ও খেলার মাঠ দখলের কার্যক্রম থেকে পরিত্রাণ চাই।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও মিঠাখালী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা শাজাহান সাংবাদিকদের বলেন, মোল্লা পরিবারের পূর্বপুরুষের পক্ষ থেকে এই স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য ৫০ শতক জমি দান করেছিল। ১৯৫৭ সালে এ স্কুলের ভবন নির্মাণ ও বাজার বসার ফলে মাঠটি অত্যন্ত ছোট, তারপরেও যদি আবার এখানে দোকান ঘর তোলা হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হবে। আমি মনে করি এটা তাদের খামখেয়ালিপনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি আরও বলেন, বিগত দিনগুলোতে এই স্কুলের অনেক সুনাম ছিলো। এখন তা দুর্নামে পরিণত হয়েছে। এলাকার সুশীল সমাজ এসব অনিয়ম থেকে মুক্তি ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করছেন।
খোনকারের বেড় সরকারি প্রা. বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কনক প্রসাদ রায় এসব বিষয় এড়িয়ে গিয়ে বলেন, শনিবার স্কুলে গিয়ে খেলার মাঠ দখল করে দুইটি নতুন নির্মিত দোকান ঘর দেখতে পাই এবং সঙ্গে সাথেই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তবে দোকান ঘর তৈরির ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানায় এ প্রধান শিক্ষক। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি সভাপতি আলামিন শেখ বলেন, করোনা সময় স্কুল বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানে কি হয়েছে তা জানা নাই তবে দোকান ঘর নির্মাণের সঙ্গে তিনি জড়িত নয় বলে জানায় তিনি।
জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মাদ শাহ-আলম বলেন, বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ নষ্ট করে দোকান ঘর নির্মাণ করা যাবেনা এবং বিদ্যালয়-কাম-সাইক্লোন শেল্টারের রুম বা অবশিষ্ট জমি দখল করে অন্য কোন কার্যক্রম করা আইন পরিপন্থী। এ ব্যাপারে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার জানান, স্কুল অথবা কোন খেলার মাঠ বন্ধ করে শুধু দোকান নয় অন্য কোনো কার্যক্রমও কেউ করতে পারবে না। এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি, তবে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। কোমলমতি শিশুদের খেলার মাঠ বন্ধ করে দোকান নির্মাণ হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় নির্বাহী কর্মকর্তা।