মামলা প্রত্যাহার ও দলই বাগান খুলে দেয়ার দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করছে দলই চা-বাগানের শ্রমিকরা। সেই সাথে উত্তেজিত শ্রমিকরা (২৪ আগস্ট) দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলা কার্যালয় সম্মুখের রাস্তা অবরোধ করে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়।
মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ উপজেলার দলই চা বাগানের মালিক কর্তৃপক্ষ বাগানে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়ার অভিযোগ এনে সম্প্রতি বাগান বন্ধ করে দেয়।
এতে চা শ্রমিকদের মধ্যে আরও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন চা শ্রমিক সংগঠন বাগান ব্যবস্থাপকের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তাকে বাগান থেকে সরিয়ে নেয়া ও বাগান খুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে।
এতে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার একাধিক চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু করে। এ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন শ্রমিক পক্ষ ও বাগান মালিক পক্ষকে নিয়ে সম্প্রতি একাধিক সমঝোতা বৈঠক করে।। এতে দুপক্ষের মধ্যে কোন সমঝোতা হয়নি।
শ্রমিকের দাবি চা বাগান ব্যবস্থাপক মো. আমিনুল ইসলামকে বাগান থেকে সরিয়ে নেয়া। কিন্তু মালিক পক্ষ তা মানতে রাজি হয়নি। অবশেষে পূর্বের নির্ধারিত বৈঠকে দুপক্ষের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসে বাগান ব্যবস্থাপককে সরানোর।
জানা যায়, এ সিদ্ধান্ত মতে ১৯ আগস্ট বাগান খুলে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়। বাগান মালিক পক্ষ জানিয়েছে, এদিন বাগানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দুপুরের দিকে বাগানে উপস্থিত হলে শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। এতে তাদের অনেকেই আহত হন। এছাড়া তাদের গাড়ি ভাংচুর করে শ্রমিকের মজুরির টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিক কর্তৃক মারধর, গাড়ি ভাংচুর ও টাকা লুটের অভিযোগ এনে কমলগঞ্জ থানায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে পরদিন মামলা দায়ের করেন।
এদিকে চা শ্রমিকরা অভিযোগ করে, ঘটনার দিন বাগান ব্যবস্থাপককে বাগানে দেখতে পেয়ে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। এ সময় মালিক কর্তৃপক্ষ তাদের কয়েকজন নারী চা শ্রমিককে লাঞ্ছিত করায় শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে ইট পাটকেল ছুঁড়লে গাড়ির গ্লাস ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় বাগান মালিক পক্ষের কেউ আহত হয়নি।
শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, মজুরি প্রদান ও দলই বাগান খোলে দেয়ার দাবিতে সোমবার (২৪ আগস্ট) দুপুর থেকে সাধারণ শ্রমিক ও ছাত্র যুব পরিষদের ব্যানারে একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দেন চা শ্রমিক নেত্রী গীতা রানী কানু।
শ্রমিকরা আজ সকালে দিকে দলই বাগান থেকে লংমার্চের মাধ্যমে দুপুরের দিকে কমলগঞ্জ উপজেলা কার্যালয় সম্মুখে এসে অবস্থান নেয়।
সেখানে তাদের দাবি দাওয়া তুলে ধরে সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধের ফলে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক হাজার শ্রমিক রাস্তা অবরোধ করে দলই চা বাগান খোলে দেয়া, তাদের মজুরি প্রদান ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।
সভায় সাধারণ শ্রমিকদের দাবি বাগান খোলে দিয়ে সকল সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হলে তারা কঠোর কর্মসূচি পালন করবে। এদিকে বিকাল ছয়টার পর শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়েছে।