মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি : মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার ৭নং কামারচাক ইউনিয়নের মৌলভী চক গ্রামে পূর্ব বিরোধের জের ধরে পিতা পুত্রের উপর হামলার ঘটনার ঘটেছে।
গতকাল ২১ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুয়েত প্রবাসী ভাই আব্দুল মান্নান চৌধুরী (৫০) ও তার পুত্র মুমিন চৌধুরী (১৮) এর উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ পাওয়া যায় ।
গুরুতর আহত মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রবাসী আব্দুল মান্নান চৌধুরী ও তার পুত্র আব্দুল মুমিনসহ অন্যান্য লোকজন জানান- ২০০৪ সাল থেকে আব্দুল মান্নান দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ কুয়েতে অবস্থান থাকাকালে তার অর্জিত প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা পরিবারের লোকজনের নিকট পাঠান ।
গত ২৮ মে ২০২০ ইং তারিখে কুয়েত থেকে বাংলাদেশে এসে আব্দুল মন্নানের পাঠানো টাকার হিসাব ও পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে কথা বলেন এবং তাহার প্রেরিত টাকা ফেরত ও হিসাব চাইলে পরিবারের লোকজন আপন ছোট ভাইদের সাথে ধন্ধের সৃষ্টি হয় । এ নিয়ে প্রথমে পারিবারিক ভাবে কয়েকবার শালিশ বৈঠকে সমাধান না হলে।
একসপ্তাহ পূর্বে স্থানীয় ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান শালিসের জন্য বললে তিনি একা তা সমাধান করতে পারবেন না বললে গত পরশু ২০ সেপ্টেম্বর হামলার শিকার কুয়েত প্রবাসী বিষয়টি শালিস বৈঠকের মাধ্যমে শেষ করার জন্য ৭নং কামারচাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল হক সেলিমের শরণাপন্ন হন।
আর এর জের ধরে গতকাল ২১ সেপ্টেম্বর সকাল অনুমান সাড়ে ৯টায় আব্দুল মন্নানের আপন ছোট ভাই আব্দুল আলিক চৌধুরীর পরিকল্পনা ও অংশগ্রহণেতার আপন ভাই আব্দুর রকিব চৌধুরী (৩৮), আব্দুল খালিক (৩২), আব্দুল আলিম চৌধুরী, আল আমিন(২০) আব্দুর রকিবের স্ত্রী রেহেনা বেগম, আব্দুল আলিকের স্ত্রী সুমি বেগম ও মা জহুরা বেগমসহ অজ্ঞাত ২-৩জন মিলে প্রথমে পিছন থেকে লোহার রড দিয়ে আব্দুল মন্নানের পায়ে ও কমরে আঘাত করে।
এসময় আব্দুল মন্নানের পুত্র আব্দুল মুমিন (১৮) এগিয়ে আসলে উভয়ের উপর অতর্কিতভাবে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হাত পা পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে আঘাত করতে থাকে।
একপর্যায়ে রামদা দিয়ে আব্দুল মন্নান চৌধুরীর মাথার দুপাশে কুব মারে এবং তার ছেলে মুমিনের মাথার একপাশে কুব মারে।
তাদের আত্মচিৎকার শুনে এলাকার লোকজন চলে আসলে গুরুতর জখম করে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
আব্দুল মন্নান চৌধুরীর ছোট ভাই আব্দুল আলিকের সাথে মুঠোফোনে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, উনার ভাই দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন দেশে আসার পর মায়ের কাছে পাঠানো খরছের টাকা ফেরত চাইলে তা পারিবারিক ভাবেই আব্দুল মন্নান চৌধুরী মা জহুরা বেগম তা ফেরত দিয়ে দিবেন বলে পারিবারিক ভাবে কথা হয়।
হামলায় অংশগ্রহন ও পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হামলার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। ঐ সময় আব্দুল আলিক একই গ্রামে উনার শশুর বাড়িতে ছিলেন, হামলার বিষয় শুনে তিনি এসে আব্দুল মন্নান চৌধুরী ও উনার ছেলেকে রাস্তায় গাড়িতে আহত অবস্থায় দেখতে পান। এবং তাদের সাথে হাসপাতালে যাওয়ার কথা বললেও তাকে নেয়া হয়নি। পরে আব্দুল আলিক উনার দুই চাচাতো ভাইকে সাথে নিয়ে আহত বড় ভাই আব্দুল মন্নান চৌধুরী ও উনার ছেলেকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখে আসেন এবং বলে আসেন আগে দ্রুত চিকিৎসা হোক পরে এ বিষয় দেখা যাবে। যেভাবে সমাধান করা যায় সেটা চেষ্টা করা হবে ।
হামলা কে বা কারা করেছে তিনি এব্যাপারে কোন জানেন না বলে জানান। কারন ঐসময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ভাই গুরুতর আহত থাকায় তিনি কে বা কারা কি কারনে হামলা করেছে তা জানতে চাননি।
এছাড়া তাদের সাথে বিরোধ নেই তবে পৈত্তিক সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারার বিষয়ে এলাকার মুরব্বিগন অবগত আছেন বলে আব্দুল আলিক জানান।
আহত আব্দুল মন্নান চৌধুরীর অভিযোগ করা অন্যান্য হামলাকারীদের কোন বক্তব্য নেয়া যায়নি।
কামারচাক ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, হামলার ঘটনা শুনেছেন এবং বিষয়টি তাদের পারিবারিক। মিমাংসার জন্য প্রক্রিয়াধীন ছিল।
আজ ২২ সেপ্টম্বর দুপরে ৭নং কামারচাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিম ও ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান আহত আব্দুল মন্নান চৌধুরী ও উনার ছেলে আব্দুল মুমিনকে দেখে এসেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে আহত আব্দুল মন্নান চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে উনার ছেলে জাহাঙ্গীর চৌধুরী জানান, তার পিতা আব্দুল মন্নান চৌধুরী ও তার ভাই আব্দুল মুমিন এখনো আশংকাজনক অবস্থায় মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিস্ট সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং হাসপাতালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এর সদস্যগণ হাসপাতালে আহতদের পরিদর্শন করে খোজ নিয়ে আসছেন।
এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি তবে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান আহত আব্দুল মন্নান চৌধুরীর ছেলে জাহাঙ্গীর চৌধুরী।
রাজনগর থানার অফিসার্স ইনচার্জ আব্দুল হাসিম জানান, এব্যাপারে থানায় কোন অভিযোগ আসেনি, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।