বড় ভাইদের কথামতো না চলাই বেয়াদবি। আর আদব শেখাতে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র সংসদ রুকসু ভবনে নিয়ে চলতো নির্মম নির্যাতন। ধীরে ধীরে রুকসু ভবন পরিণত হয় টর্চার সেলে। নির্বাচিত ছাত্র সংসদ থাকলেও রুকসু ভবন ছিলো বহিরাগতদের দখলে। হিমেল মাহবুব এর ধারাবাহিক রিপোর্টের চতুর্থ পর্ব।
ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ। লেখাপড়ার পাশপাশি নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন কলেজকে আলাদা করে তোলে। এই ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি এবং শিক্ষার্থীদের জন্য হলেও রুকসু ভবন চলে যায় ফরিদপুর শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারহান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শামীম এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জীবন, তাদের গাড়ির ড্রাইভার ও বহিরাগতদের দখলে।
কলেজের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলতো এই সব বড় ভাইদের কথামতো। অবাধ্য হলেই রুকসু ভবনে নিয়ে চলতো নির্মম নির্যাতন।
বর্তমান ছাত্র সংসদের ভিপি মারুফ ও জিএস সজল। ২০১৭ সালের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কাঙ্খিত পদে মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর এই অপরাধে রুকসু ভবনে নিয়ে তাদের হাত-পা ভেঙ্গে দিয়ে শাসন করেন ফাহিন-ফারহান।
সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মোহাম্মদ নূর হোসেন মারুফ বলেন, ‘ফাহিম বাড়ি মারে আমার বাম হাতে, মারলে আমি হাত ধরি। তখন ফারহান ভাই পেছন দিক দিয়ে লাথি মেরে ফেলে দেয় আমাকে। ফারহান ভাই আমার গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে। আমার মাথায় শেষে বাড়ি দিতে গেলে আমি ঠেকাতে যাই, তখন আমার হাত ভেঙে যায়।’
জিএস আসিফ ইমতিয়াজ সজল বলেন, ‘আমি রুকসুতে ঢোকার সময় ফারহান আমাকে মারতে মারতে ভেতরে নিয়ে যায়। তারপর তারা আমাকে খালি গা করে নৃশংসভাবে টর্চার করতে থাকে।’
তারপর ওই ঘটনার দায় ছাত্রদলের উপর চাপিয়ে মামলা দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটেন কথিত বড়ভাই ফাহিম-ফারহান, শামীম, সাইফুলরা।
সরকারি কলেজের দেয়াল থেকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছবি মুছে দিয়ে নিজের নাম লিখাতে চেয়েছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম জীবন। তাতে বাধা দেয়ায় কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাইনুল ইসলামকে।
আর বিরোধী মতের কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন ছিলো নিয়মিত ঘটনা। ফরিদপুর ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবরার নাদিম ইতু বলেন, ‘রুকসুতে যারা আসতো, যারা ছিলেন তারা সবাই অছাত্র ছিলেন।’
সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্র ইউনিয়ন যুগ্ম আহ্বায়ক শীতাংশু ভৌমিক অঙ্কুর বলেন, ‘আমরা আশা করবো আবার সাংস্কৃতিকমনা, প্রগতিশীল, বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর যেন রুকসুতে ফিরে আসে।’
এসব ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর রুকসু ভবনে তালা দিয়েছে পুলিশ। কলেজটির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোশাররফ আলী বলেন, ‘রুকসু ভবন একেবারে বন্ধ করা কোন প্রক্রিয়া না। করোনাকালীন সময়ে রুকসু ভবনসহ কার্যক্রমই তো বন্ধ।’
রুকসু ভবন আবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে এটাই সবার প্রত্যাশা।