গণহত্যার মতো অপরাধ শুধু নয়, নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতেও ছলচাতুরী থেমে নেই মিয়ানমারের। এখন পর্যন্ত ছয় লাখ রোহিঙ্গার তালিকা তাদের হাতে জমা দেয়া হলেও মাত্র ৩০ হাজার নিতে সম্মত হয়েছে দেশটি। এখন করোনার কারণে প্রত্যাবাসন ঝুলিয়ে দেয়ার নতুন অজুহাত হাতে। সব মিলে তাই গত তিন বছরে ফিরে যায়নি একজন রোহিঙ্গাও। তবে হাল ছাড়া যাবে না, এমনটাই মনে করছেন কূটনীতিকরা।
২০১৭ সালের ঢল। এ সময়টায় আসা সাত লাখসহ দেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এখন ১১ লাখের বেশি। দেশি বিদেশি নানা তৎপরতায় ওই বছরের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন চুক্তি করে দুই দেশ। চুক্তিমতে, প্রথমে রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা দেয়া হবে। সেটি যাচাই করে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার। এখানেও কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে দেশটি।
করোনার কারণ দেখিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক বাতিল করে মিয়ানমার। মার্চে ঢাকার মিয়ানমার দূতাবাসকে ৪ লাখ ৯২ হাজার রোহিঙ্গার তলিকা দেয় বাংলাদেশ। সে তালিকা বিমানে করে ইয়াঙ্গুনে পাঠানোর সময় থাইল্যান্ডে হারিয়ে গেছে, চলতি মাসে ঢাকাকে জানায় মিয়ানমার দূতাবাস। নতুন করে সবশেষ ৫ লাখ ৯৮ হাজারের তালিকা মিয়ানমারের কাছে জমা দিয়েছে দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস। এর মধ্যে মাত্র ৩০ হাজারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার কথা জানায় তারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, আমাদের প্রসেসটা স্লো হয়েছে; এর মূলে হচ্ছে কোভিড। এছাড়া তারা আরেকটি অজুহাত দিচ্ছে, সেটা হলো তাদের দেশে নির্বাচন হবে।
এখন পর্যন্ত অর্জন বলতে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারকে কাঁঠগড়ায় দাঁড় করানো। তবে কূটনীতিকরা মনে করছেন, প্রত্যাবাসন হবে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, রোহিঙ্গাদের তাদের ফেরাতে আমরা এখনো সক্রিয়। মিয়ানমারও আগ্রহী তাদের ফেরাতে। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যাতে দ্রুত হয়; সেদিকে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।
কানাডার হাই কমিশনার বেনোয়া প্রিফন্টেইন বলেন, নিরাপত্তা কাউন্সিল মিয়ানমার ইস্যুতে বিভক্ত, তাই এখানে ভালো ফল পাওয়া যাবে না। আইসিসি এবং আইসিজেতে বিচার প্রক্রিয়া খুব ধীর এবং দ্রুত এখানে সমাধানের আশা নেই। তাই বাংলাদেশকে বহুমুখী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। যদিও আমরা আশাবাদী, তবে বাস্তবতা হলো, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া একটি সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
আলোচনার মধ্যস্থতা করছে চীন। আগামী বছর থেকে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদ পেতে যাওয়া ভারতও প্রত্যাবাসন আলোচনায় যুক্ত হতে চায়।