নতুন আমির নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের অতীত কর্মকাণ্ডের আত্ম-সমালোচনা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস বলছেন, নানা সময়ে লাইনচ্যুত হয়েছে ধর্মীয় সংগঠনটি। নেতৃত্বের অযোগ্যতা ও অদূরদর্শিতায় শাপলা চত্বরে বিপর্যয় নেমে এসেছিল।
ধর্ম রক্ষার উদ্দেশ্যের কথা বলে দশ বছর আগে হেফাজতে ইসলামের যাত্রা শুরু। সম্প্রতি আহমদ শফীর মৃত্যুতে প্রথমবারের মত ধর্মীয় সংগঠনটির প্রধানের পদ শূন্য। এখন পরবর্তী নেতা নির্বাচন নিয়ে নিয়ে চলছে টানাপোড়েন।
এরমধ্যেই হেফাজতের অতীত কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস। তার মতে, আহমদ শফীর বাইরে অন্য নেতাদের অযোগ্যতায় ডুবেছে সংগঠনটি। যার রেশ এখনো চলছে, স্তিমিত হয়ে পড়েছে হেফাজতের কার্যক্রম। বেঁধে দেয়া সময়ের পরও শাপলা চত্ত্বরে অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করে হেফাজতে ইসলামের সহ-সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস বলেন, ‘লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছিলাম আমরা। অতীতের ভুল সংশোধন করার প্রয়োজন আছে। ভুলের উপলব্ধিরও প্রয়োজন আছে। আমরা সময় এতটুকু পাচ্ছি, তারপরও সময় পার হওয়ার পর আমরা ইচ্ছে করে থাকলাম। হয়তো এই মানুষগুলোকে আমরা যদি মাগরিবের আগে বিদায় দিতে পারতাম তাহলে তো এরকম বিপর্যয় তো আর হয় না। ভুল সংশোধন ছাড়া সংগঠনকে এগিয়ে নেয়া কঠিন।’
হেফাজতের এই নেতা আরো বলেন, ‘আহমদ শফীর মত আর কোন ব্যক্তিত্ব নেই চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায়। তাই সংগঠনের সদরদপ্তর হাটহাজারী থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা দরকার। সম্মিলিতভাবে সবার হেফাজতের আন্দোলনকে ধরে রাখা দরকার।’
তবে হেফাজত মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর ঘনিষ্ঠজনরা মনে করেন, হাটহাজারী থেকে সভাপতি, আর ঢাকা থেকে মহাসচিব হলে সংগঠন পরিচালনায় গতি আসবে। ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ফজুলল করিম কাসেমী বলেন, ‘বাবুনগরী সাহেব সারা দেশের শীর্ষ ওলামাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই করবেন। শীর্ষ পদটা আমরা মনে করি হাটহাজারী থেকে হলেই ভালো হয়। চট্টগ্রাম ও ঢাকা সমন্বয় যদি হয় বাংলাদেশে কাজের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।’
মহাসচিব-বিরোধীদের শঙ্কা, সাজানো কাউন্সিলের মাধ্যমে নিজে অথবা পছন্দের ব্যক্তিদের হেফাজতের নেতৃত্বে আনতে পারেন জুনায়েদ বাবুনগরী। এ ধরনের কোন কারসাজি হলে কঠোর জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দিন রুহি। তিনি বলেন, ‘কোন কারসাজির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত না হোক এবং কোন কাউন্সিল না হোক। যদি কারসাজি করা হয় তবে এর পাল্টা ব্যবস্থাও আলেম-ওলামারা নিবেন। তারা সহজভাবে এটা মেনে নিবে না।’
অভ্যন্তরীণ টানাপোড়নের জেরে কাউন্সিল হতে আরো সময় লাগবে বলে মনে করছেন হেফাজতের কর্মীরা।