নাম মো. লিটন। পিতা মৃত নুরুল ইসলাম। বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৪নং চাতলা গ্রামে। পেশায় দিনমজুর। তবে ওই গ্রামেই চাতলা হাইস্কুলের পেছনে মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে ঢাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত মো. লিটনের বাড়ি হওয়াই কাল হলো দিনমজুর লিটনের।
নাম ও বাবার নাম এক হওয়ায় গত বছর ৭ ডিসেম্বর ওই এলাকার মেঘনা নদীর তীরে ব্লকের কাজ করার সময় লালমোহন উপজেলার মঙ্গল দিকদার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই মো. জমিস উদ্দিন তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। পরে সেখান থেকে তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে বিনাদোষে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে ঢাকার কেরানীগঞ্জে কারাভোগ করছেন দিনমজুর মো. লিটন।
ঢাকার পল্টন থানার মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪২/০৯ জিডিতে ২০০৯ সালের ২৮ জুন দুপুর দেড়টার দিকে ডিবির সোয়াত টিমের এসআই জুলহাস উদ্দিন আকন সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সসহ পল্টন থানার পুলিশ বক্সের সামনে থেকে ভারত ও পাকিস্তানের তৈরি আমদানি নিষিদ্ধ ৩০০ পিস অজ্ঞান করার ট্যাবলেটসহ মো. লিটন, মো. শামীম ও আরশাদ মিয়া নামে তিনজনকে গ্রেফতার করেন। এ ঘটনায় আটক তিনজনের বিরুদ্ধে ডিবির এসআই জুলহাস উদ্দিন আকন বাদী হয়ে পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মো. লিটনের বয়স ২৬ বছর উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে কারাগারে থাকা দিনমজুর মো. লিটনের বয়স জাতীয় পরিচয়পত্র অনুয়ায়ী সে সময় ১৮ বছর ছিল।
এদিকে ওই মামলাটি আদালতে বিচারের আগেই গ্রেফতার তিন আসামি জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। পরে ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ বিচারে ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং ২-এর বিচারক জাকিয়া পারভিন আসামিদের ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(২) ধারায় প্রত্যেককে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও দুই মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। কিন্তু আসামিরা পলাতক ছিলেন।
এদিকে এ মামলায় ভোলার লালমোহন থানায় ওয়ারেন্ট আসলে মঙ্গল দিকদার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই মো. জসিম উদ্দিন মো. লিটন নামে ওই দিনমজুরকে ব্লকের কাজ করার সময় গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। সেসময় লিটন গ্রেফতারের কারণ জানতে চাইলে তাকে একটি মামলার আসমি বলে জানানো হয়।
মো. লিটনের ভাই রিকশাচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই দিনমজুরের কাজ করে সংসার পরিচালনা করে। সে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়। মো. লিটন নামে আমাদের গ্রামে একজন আছে সে অনেক আগে থেকেই ঢাকায় থাকে। শুনেছি ঢাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সে জড়িত। শুধু নামের মিল থাকায় পুলিশ আমার ভাইকে ভুল করে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে। বর্তামানে আমি আমার ভাইয়ের মুক্তির জন্য ঢাকার আদালত ও আইনজীবীদের কাছে ছুটে বেড়াচ্ছি।
তিনি আরও জানান, রিকশা চালিয়ে সংসার পরিচালানা ও ভাইয়ের মুক্তি জন্য প্রতিদিনই ছুটছি। জানিনা আল্লাহ কবে আমাদের দিকে তাকাবেন। লিটনের স্ত্রী ও দুই সন্তানের দিকে তাকাতে পারি না। তারা অসহায় জীবনযাপন করছে।
ধলী গৌরনগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সালাউদ্দিন জানান, এএসআই জসিম উদ্দিন আমাকে লিটনকে গ্রেফতারের আগে মো. লিটন, পিতা নুরুল ইসলাম নামে এক আসামিকে খুঁজছে বলে জানান কিন্তু আমি তখন তাকে আসামির কোনো খবর দিতে পারিনি।
তিনি আরও জানান, গত ৬-৭ দিন আগে আমরা জানাতে পারি আসলে পুলিশ যে লিটনকে গ্রেফতার করেছে সে এই লিটন না। পুলিশ মূলত ওই এলাকার বাসিন্দা যে দীর্ঘদিন ঢাকায় থেকে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সেই লিটনকে খুঁজছিল। পুলিশ ভুল করে দিনমজুর লিটনকে গ্রেফতার করেছে। এ বিষয়ে আমরা এলাকার গণ্যমান্যরা আগামী ১-২ দিনের মধ্যে পুলিশের কাছে যাব। নির্দোষ লিটনকে মুক্ত করতে আমরা এলাকাবাসী মাঠে নামব।
এ ব্যাপারে মঙ্গল শিকদার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই মো. জসিম উদ্দিন জানান, লিটনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানোর ১৫ দিন পর তার ভাই সাইফুল আমার কাছে এসে জানান গ্রেফতারকৃত লিটন মামলার আসামি লিটন না। আসামি লিটনের বাড়ি তাদের এলাকার পাশে স্কুলের পিছনে। তারা নাকি দীর্ঘদিন ঢাকা রয়েছে। পরে আমি তার কথা শুনে তাকে মামলার নথি নিয়ে আসতে বলি। ভুল আসামিকে গ্রেফতার করলে নথিতে আসল আসামির পিতা ও মাতার নামসহ সব পাওয়া যাবে। যদি ভুল হয় নথি নিয়ে আসার পর তাকে নিয়ে ওসি স্যারের কাছে যাব বলেছি। পরে সে এখনও আসেনি।
লালমোহন থানার ওসি মীর খায়রুল কবির জানান, এ বিষয়ে আমি কখনও শুনিনি। নাম ও পিতার নাম এক থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। যদি এ লিটন আসামি না হয় তাহলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।