সিরাজগঞ্জে বাবু হত্যা মামলায় জড়িত আপন ভাতিজাসহ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারকুত আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আরো ৩ জনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন সিরাজগঞ্জ এর পুলিশ সুপার রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। শনিবার সকালে শহরতলীর শিয়ালকোলে অবস্থিত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করে এ তথ্য জানান।
গত ১৪ই জুলাই সকালে সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি উপজেলার সাড়টিয়া গ্রামের আব্দুস সালাম এর ইউকালিপটাস গাছ বাগানে একই গ্রামের মোঃ নুরনবী বাবু মিয়া নামে এক যুবকের মরদেহ দেখতে পেয়ে তার পরিবারকে খবর দেয়। সংবাদ পেয়ে নিহতের বড় ভাই মোঃ শাহিন ঘটনাস্থলে এসে মরদেহটি তার ছোট ভাই বাবু’র বলে শনাক্ত করেন। পরবর্তীতে ভিকটিমের বড় ভাই মোঃ শাহিন বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর থেকেই পিবিআই ছায়া তদন্ত করতে থাকে এবং পরবর্তীতে গত ৫ই সেপ্টেম্বর পুলিশ সুপার (পিবিআই) মোঃ রেজাউল করিম স্ব-উদ্যোগে উক্ত মামলাটি তদন্ত করার জন্য অধিগ্রহন করে। তদন্তের এক পর্যায়ে জানা যায় যে, নিহত মোঃ বাবু মিয়ার কাছে সার্বক্ষনিক এক থেকে দেড় লাখ টাকা থাকত। এলাকার বিভিন্ন লোককে এবং জুয়ারীদেরকে সুদের উপর টাকা ধার দিত। পিবিআই সিরাজগঞ্জ জেলা টিম সেদিকেই লক্ষ রেখে তদন্ত করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে বাবু মিয়া টাকার জন্যই দূর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছে বলে পিবিআই জানতে পারে। পরবর্তীতে পিবিআই সিরাজগঞ্জ জেলা টিম গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে, উক্ত ঘটনার সাথে বাদী এবং বাবুর আপন ভাতিজা মোঃ বেলাল হোসেন সোহাগ উক্ত হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত।
গত ১৩ই অক্টোবর ভিকটিমের ভাই স্বপন শেখের ছেলে আপন ভাতিজা মোঃ বেলাল হোসেন সোহাগ এবং পার্শ্ববর্তী চন্দ্রকোনা গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে মিজানুর রহমান মৃদুলকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
গ্রেপ্তারের পর মোঃ বেলাল হোসেন সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে জানায় যে, তার চাচা বাবু মিয়া এলাকার বিভিন্ন লোকজনকে এবং জুয়ারীদেরকে সুদের উপর টাকা দিলেও তাকে কোন টাকা পয়সা দিত না। এই বিষয় নিয়ে তার চাচার সাথে আসামী মোঃ বেলাল হোসেন সোহাগ এর প্রায়ই কথা কাটাকাটি হত। তাই সে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে এবং সুদে টাকা নেয়া অন্যান্য আসামিদের নিয়ে টাকা ফেরত না দেয়ার ফন্দি আঁটতে থাকে। বাবুকে মারতে সহযোগিতা করলে টাকার কিছু অংশ সোহাগকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে চাচা বাবু বাড়ি ফেরার সময় মোঃ আঃ সামাদ এর ইউকালিপটাস গাছ বাগানের কাছে আসা মাত্রই বেলাল হোসেন সোহাগ লোহার পাইপ দিয়ে পিছন থেকে ভিকটিমের মাথায় বাড়ি মারে এবং অন্যান্যরা গলায় গামছা পেচিয়ে ও পা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।
পিবিআই তদন্ত শেষে নিশ্চিত হয়ে গত ১৪ই অক্টোবর সোহাগ ও মৃদুলকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করলে আসামীরা ১৬৪ ধারায় জবানন্দীতে তাদের অপরাধ স্বীকার করে এবং জড়িতদের নাম প্রকাশ করে। বাকি আসামীদেরকে গ্রেপ্তারের জন্য পিবিআই, সিরাজগঞ্জ জেলা টিম অভিযান পরিচালনা করছে বলেও পুলিশ সুপার জনাব মোঃ রেজাউল করিম গণ মাধ্যমকে জানান।