কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকায় গত ৩১ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। ওই ঘটনায় টেকনাফ থানায় একটি ও রামু থানায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করে। রামু থানার মামলায় আসামি করা হয়েছিল স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শিপ্রা দেবনাথসহ অন্যদের। আটকের পর শিপ্রাকেও কক্সবাজার কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
গত ৯ আগস্ট রামুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেছিলেন শিপ্রা। পরে ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার চেয়ে ভিডিও বার্তা দেন। এরপর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সামাজিকমাধ্যমে তাকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
সমালোচকরা তাকে নিয়ে নানা প্রশ্নও তুলছেন। ঘটনার সময় শিপ্রা সিনহার গাড়িতে কেন ছিলেন না এমন প্রশ্নও তোলা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে শিপ্রা বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। সোমবার (১৭ আগস্ট) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ভিডিও বার্তায় সে রাতে কী ঘটেছিল এবং তিনি কোথায় কীভাবে ছিলেন তার বর্ণনা দিয়েছেন।
ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, ঘটনার দিন ৩১ জুলাই রাত ১২টার পর প্রায় ১০-১২ জন পুলিশ আমাদের রিসোর্টে প্রবেশ করেন। কোনো সার্চ ওয়ারেন্ট এবং নারী পুলিশ ছাড়াই তারা এখানে আসেন। এবং আমাকে সময় না দিয়ে আমার অনুমতি ছাড়াই তারা আমাদের কটেজে তল্লাশি শুরু করেন।
তিনি জানান, আমি বার বার আমার সহকর্মী ও বন্ধু মেজর সিনহা এবং সিফাতের ব্যাপারে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করি। কিন্তু তারা কোনো ধরণের তথ্য আমাকে দেয়নি। রাত আনুমানিক আড়াইটার পর কিছু সিভিল ড্রেসে আসা পুলিশ অফিসার এলে আমি তাদের প্রশ্ন করি। তখন তারা আমাকে জানায়, ‘ইয়েস, সিনহা ইজ ডেড’।
শিপ্রা জানান, এরপর ওই রাত সাড়ে চারটার দিকে আমাকে ও আমার আরেক সহকর্মীকে তাহসিনকে কোনো প্রকার পূর্ব ইঙ্গিত ছাড়াই রামু থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। পুরোটা সময়ে যতজন অফিসার ও তদন্তকারী পাশে পেয়েছি তাদের সবার কাছে আকুল আদেবন করেছিলাম আমাকে যা ইচ্ছা করেন। আমি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি না। কিন্তু মেজর সিনহাকে একবার দেখতে দিন। কিন্তু আমার সে আকুতিতে তারা বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেননি।
শিপ্রা আরও জানান, এরপর রাত ৮-৯টা নাগাদ আমাকে একা একটি পুলিশ ভ্যানে উঠিয়ে আনা হয়। এরপর আবিষ্কার করি তারা আমাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। এবং আমি সেখানেই প্রথম জানতে পারি, আমি নাকি মাদক মামলার আসামি!
গত ৩ জুলাই স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের তিন শিক্ষার্থী শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাহসিন ইফাত নূর কক্সবাজারে যান। ‘জাস্ট গো’ শিরোনামে মেজর (অব.) সিনহা যে তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজ করছিলেন, সেখানে কাজ করছিলেন এই তিন শিক্ষার্থী।