নেদারল্যান্ডসে অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন দেশটির অতি-ডানপন্থি, অভিবাসনবিরোধী ও ইসলামবিরোধী রাজনীতিবিদ এবং সরকার দলীয় আইনপ্রণেতা গির্ট ভিল্ডার্স৷ নয়ত সরকার ভেঙে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি৷
সোমবার (২৬ মে) দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী হেগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান দেশটির জোট সরকারের অংশীদার পার্টি ফর ফ্রিডমের প্রধান নেতা৷ তার দাবির মধ্যে আছে, সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো, সীমান্তে কড়া নজরদারি, সীমান্ত তল্লাশিতে সেনা মোতায়েনের মতো কঠোর পদক্ষেপ৷
সংবাদ সম্মলনে তিনি বলেন, ‘‘আশ্রয়প্রার্থী ও পারিবারিক পুনর্মিলনের ক্ষেত্রে সীমান্ত বন্ধ করুন৷ নতুন করে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা যাবে না৷ সব বন্ধ করুন৷’’
তার এমন কঠোর প্রস্তাব চার দলীয় ক্ষমতাসীন জোটের উপর তীব্র চাপ তৈরি করেছে৷ ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত দেশটির সাধারণ নির্বাচনে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সর্বোচ্চ আসন পায় ভিল্ডার্সের নেতৃত্বাধীন অভিবাসনবিরোধী পার্টি ফর ফ্রিডম৷ ১৫০টি আসনের মধ্যে ৩৭টি জিতে নেয় তার দল৷ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দীর্ঘ অপেক্ষার পর চার দলীয় সরকার গঠিত হয়৷
জোট সরকারে থাকা চারটি দল হলো: পার্টি ফর ফ্রিডম, ডানপন্থি পিপলস পার্টি ফর ফ্রিডম অ্যান্ড ডেমোক্রেসি, সংস্কারবাদী নিউ সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট এবং জনপ্রিয় ধারার ফার্মার্স সিটিজেনস মুভমেন্ট৷ নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার গঠনের পর থেকেই অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর সব পদক্ষেপ নিতে থাকে নেদারল্যান্ডস সরকার৷
‘কয়েক সপ্তাহের মধ্যে’ এই ১০ দফা দাবি মেনে নেয়া না হলে তার দল সরকারে থাকবে না বলেও সাফ জানিয়েছে দিয়েছেন এই কট্টর ডানপন্থি নেতা৷ তিনি বলেছেন, তার দল ‘‘মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে যাবে৷’’
(ফাইল ছবি) কয়েক সপ্তাহের মধ্যে’ দাবি মেনে নেয়া না হলে তার দল মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে যাবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কট্টর ডানপন্থি নেতা গির্ট ভিল্ডার্স৷
নেদারল্যান্ডসে ইসলাম এবং অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর নীতিমালার আহ্বান জানিয়ে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়েছেন গির্ট ভিল্ডার্স৷ দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলে থাকলেও তার দল এখন ক্ষমতার অংশীদার৷
তিনি বলেছেন, কয়েক মাস ধরে চলমান আলোচনা এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে জোট সরকারের অপ্রতুল পদক্ষেপের কারণে তার ধৈর্য ফুরিয়ে গেছে৷
গির্ট ভিল্ডার্সের এসব দাবি পূরণ করতে হলে জোট সরকারের মন্ত্রীদের এসব প্রস্তাবে ঐকমত্যে আসতে হবে৷ তারপর প্রস্তাবগুলো সংসদে উত্থাপন করা যাবে৷
ভিল্ডার্স বলেছেন, অক্টোবরে সীমান্ত নজরদারি পুনঃপ্রবর্তন, আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তির পারিবারিক পুনর্মিলনের সুযোগ সীমিত করা এবং অস্থায়ী ভিসার মেয়াদ কমানোর মতো পদক্ষেপ গ্রহণের পর অভিবাসন ইস্যুতে আর কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি জোট সরকার৷ এ কারণে তার ধৈর্যচ্যুতি হয়েছে৷
তিনি বলেন, জোট সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট নয় ৷’’
গির্ট ভিল্ডার্সে ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে: সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো, কঠোর সীমান্ত নজরদারি এবং সীমান্ত তল্লাশিতে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া৷
অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে: শরণার্থী মর্যাদাপ্রাপ্ত আশ্রয়প্রার্থীদের পারিবারিক পুনর্মিলন সাময়িকভাবে বন্ধ করা৷
আশ্রয়প্রার্থী হিসাবে অথবা অস্থায়ী ভিসায় নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত সিরীয়দের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো৷ এক্ষেত্রে ভিল্ডার্স যুক্তি দেখিয়েছেন, বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার বেশিরভাগ অংশ এখন নিরাপদ৷
সহিংস বা যৌন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত অভিবাসীদের অবশ্যই নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে৷ এই দাবিকে ‘‘একটি ঘটনা, আপনাকে যেতে হবে’’ নীতি বলে উল্লেখ করেছেন ভিল্ডার্স৷
দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তি যদি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়, তাকেও নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি৷
নতুন করে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ না করারও দাবি জানিয়েছেন এই নেতা৷ যেসব আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলো বন্ধেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি৷
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেশী দেশ জার্মানিকে উদাহরণ হিসাবে সামনে আনেন এই রাজনীতিবিদ৷ তিনি বলেন, ‘‘কিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে আছে প্রতিবেশী জার্মানি৷’’
ইউরোপীয় কনভেনশন থেকে বেরিয়ে আসতে অন্য দেশগুলোরও একসময় নেদারল্যান্ডসকে প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন তিনি৷
চলতি মাসের শুরুতে দায়িত্ব নিয়েই জার্মানির নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডট অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে আরো বেশি পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন৷ এমনকি সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর মতো সিদ্ধান্তও নিয়েছে জার্মানি৷
নিউজ: মো: ওয়ালী উল্লাহ, সৃষ্টিবার্তা