আওয়ামী লীগের অনুকম্পায় চট্টগামের পটিয়ার সাবেক ওসি নেয়ামত পিপিএম পদক পেয়েছিলেন, এমন দাবি করছে বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মী। তাদের দাবি, আওয়ামী আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালাতেন ওসি নেয়ামত। আওয়ামী লীগের জন্য নিজের সব উজাড় করে দিয়েছিলেন তিনি। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালিয়ে পিপিএম পদক পেয়েছেন পুলিশের এ সদস্য। তার এ উপাধি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বর্তমানে নোয়াখালী পুলিশ লাইন্সে থাকা নেয়ামত। তার দাবি, পটিয়ায় বিএনপির তিনটি গ্রুপ রয়েছে। একটি গ্রুপ উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে এসব অভিযোগ তুলছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৩ সালে পটিয়া থানায় পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে যোগ দেন নেয়ামত। সে বছরের ২৮ অক্টোবর শান্তিরহাটস্থ বিএনপির মিছিলে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন তিনি। তার কথা মতো গুলি চালায় পুলিশের সদস্যরা। এতে মিছিলের অগ্রভাবে থাকা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল এনামসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। এতে করে পঙ্গু হয়ে যান বেশ কয়েকজন।
বিএনপি নেতাদের দাবি, পুলিশের ছোঁড়া গুলির একটি অংশ সামনে থাকা নেয়ামতের হাতের মাংস পেশিতেও লাগে। তিনি ওই গুলি বিএনপির মিছিল থেকে ছোঁড়া হয় বলে উল্লেখ করেন। এর বিনিময়ে বীরত্ব ও সাহসীসকাপূর্ণ ওসির স্বীকৃতি হিসেবে ওই বছর পিপিএম উপাধি পান নেয়ামত। পরে পরিদর্শক (তদন্ত) থেকে দায়িত্ব নেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসাবে। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। থানায় বসে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় বাহিনীর হয়ে কাজ করেছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় আরও ক্ষিপ্ত হন নেয়ামত। সেই নির্বাচনের দিন পটিয়া থানার এসআই জাহাঙ্গীরের গুলিতে প্রাণ হারান যুবক আরমান। এ গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন নেয়ামত। একই দিন ভোট দিতে গেলে পুলিশের তাড়া খেয়ে ভাটিখাইনে মারা যান নুরুল হক তালুকদার।
পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে আহত আকতার হোসেন সিকদার বলেন, ‘নেয়ামতের নির্দেশেই আমার ওপর গুলি চালানো হয়। তার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পর্যন্ত পারিনি। তার আমলে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারেননি। থানাকে বানানো হয়েছিল টর্চার সেল। থানায় ধরে আনার পর তার কক্ষে টেবিলের নিচে বিএনপি নেতাকর্মী এক একজন করে ফেলে তাদের উপর পা দিয়ে রাখতেন নেয়ামত। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনেও তিনি বেশ প্রভাব বিস্তার করেন। ’
পটিয়ার জিরি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইব্রাহিম মেম্বার বলেন, ‘২০১৮ সালে ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে আমি এসআই জাহাঙ্গীরের পাশেই ছিলাম। ওসি নেয়ামত আদেশ দিলে তখনই ভোটারদের ওপর গুলি ছুঁড়ে জাহাঙ্গীর। গুলিবিদ্ধ হয়ে আরমান ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। মুন্না, জিয়াসহ বেশ কযেকজন আহত হন। এরপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশের সহায়তায় নৌকায় সিল মারে।’
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, ‘ওসি নেয়ামত আওয়ামী লীগের দলীয় সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দলীয় সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করা ওসি নেয়ামতের অপকর্মের বর্ণনা দিয়ে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।’
অভিযোগের বিষয়ে ওসি নেয়ামত বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যে। সেখানে বিএনপির তিনটি গ্রুপ আছে। হয়তো একটি গ্রুপ আমার বিরুদ্ধে বলছে। অন্যদের বক্তব্য নেন। তারা কী বলে শুনুন।’
গুলি লাগার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এনামের করা গুলি আমার হাতের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। আমি ২০১৩ সাল থেকে গুলি লাগার কষ্টে ভুগছি।’
পটিয়ার বিএনপির নেতাকর্মীরা আপনার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওসি নেয়ামত বলেন, ‘মামলা করার তাদের অধিকার রয়েছে। তারা মামলা করতেই পারে। রাষ্ট্র তাদের সেই অধিকার দিয়ে রাখছে। তবে, আপনি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন আমি কেমন মানুষ।’