মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খালাস পাওয়ার পর কারামুক্ত হয়ে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর পর জনসমক্ষে আসেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। এ উপলক্ষে গতকাল সকালে রাজধানীর শাহবাগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন। বলেন, আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন। আমি এখন স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন। হাসপাতাল গেটেই তাকে অভ্যর্থনা জানান দলীয় নেতাকর্মীরা। এরপর শাহবাগ মোড়ে এক জনসভায় তিনি বক্তব্য দেন। সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, প্রায় ১৪ বছর পর আমি আজ ছাড়া পেলাম। আমি এখন মুক্ত। আমি এখন স্বাধীন, আলহামদুলিল্লাহ্। আমি এখন স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক। আল্লাহ্ যদি তৌফিক দেন, অবশ্যই বাকি জীবন আপনাদের সাথেই থাকবো ইনশাআল্লাহ্।’
তিনি বলেন, এই মুক্তি শুধু আমার নয়, এটি একটি দীর্ঘ লড়াইয়ের ফল। একটি অন্যায় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সত্য চিরকাল চাপা থাকে না। আজ সেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি সর্বপ্রথম আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তবে এটা সত্য যে, এতদিন দেশে ন্যায়বিচার ছিল না। বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে। আমাদের অনেক ভাইকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার আইনজীবীরা দীর্ঘ সময় ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তারা সঠিক তথ্য-উপাত্ত, দলিল ও যুক্তি উপস্থাপন করে প্রমাণ করেছেন, এই মামলার কোনো ভিত্তি ছিল না। আল্লাহ্র রহমতে আমি আজ মুক্ত, কিন্তু যারা নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন, তাদের আর ফেরানো যাবে না।’ ৩৬ জুলাইয়ের ‘মহাবিপ্লব’ ও ৫ই আগস্টের পতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই ৩৬ জুলাইয়ের মহাবিপ্লবীদের। যাদের রক্ত, ঘাম আর আন্দোলনের ফসল আজকের এই মুক্তি। তাদের কারণেই ৫ই আগস্ট দেশের জনগণ একটি অত্যাচারী স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা ১৫ বছর ধরে রাজপথে নিজেদের রক্ত ঢেলে জনগণের ঘাড়ে চেপে বসা একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন, তাদের শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করি। এই রক্ত কখনো বৃথা যাবে না। এই আত্মত্যাগই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য আলোর পথ দেখাবে। আগামী দিনে জনগণের সঙ্গে থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি জানি, এই মুক্তির দায়িত্ব আমার ওপর আরও অনেক বড় দায়িত্ব নিয়ে এসেছে। আমি কথা দিচ্ছি, আল্লাহ্ যদি আমাকে তৌফিক দেন, তবে জীবনসায়াহ্ন পর্যন্ত জনগণের অধিকার, ন্যায়বিচার ও ইসলামী মূল্যবোধের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাবো। আমি আপনাদের সঙ্গেই থাকবো। রাজপথে পুনরায় শক্ত অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়ে এটিএম আজহার বলেন, ‘আমরা কখনও অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি, করবোও না।
আমাদের আন্দোলন থেমে নেই, থামবেও না। আজ থেকে আবার নতুনভাবে পথচলা শুরু হলো।’
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম-এর সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন- নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা আগেই বলেছি- এটা কোনো সভা নয়। জাস্ট মজলুম ভাইয়ের, মজলুম নেতার প্রাথমিক অভিব্যক্তি প্রকাশের একটা আয়োজন। আমি শুধু আল্লাহ্তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করি যে, মানুষটাকে সুদীর্ঘ ১৪টি বছর ঘাড়ের উপর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়ে জুলুম করা হয়েছে। আল্লাহ্ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। মহান রব তাকে আমাদের বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন। আমাদের এই ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন সবাই। আল্লাহ্ যেন তাকে নেক হায়াত দারাজ করেন, তিনি যেন সুস্থ থাকেন এবং জাতির প্রয়োজনে তিনি যেন তার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অব্যাহত রাখতে পারেন। এদিকে শাহবাগে অনুষ্ঠান শেষে আজহারকে দলীয় নেতাকর্মীরা মোটর শোভাযাত্রা সহকারে মগবাজার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমান আমীরের চেয়ারে তাকে বসিয়ে সম্মানিত করেন। এরপর মগবাজার আল্-ফালাহ্ মিলনায়তনে দলীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। এরপর এটিএম আজহার আজিমপুর কবরস্থানে তার মরহুম স্ত্রীর কবর জিয়ারতে যান। এ সময় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী, সমর্থক তার সঙ্গে ছিলেন।