একমাত্র ছেলে ফায়ারম্যান গাওসুল আজমের (২৩) অগ্নিদগ্ধের খবর শুনে মা আছিয়া বেগম বুক চাপড়াচ্ছেন আর বিলাপ করে বলছেন, ‘আল্লাহ আমার সোনারে তুমি সুস্থ করে দাও।’ বিলাপ করতে করতে মুর্চ্ছা যাচ্ছেন তিনি। প্রতিবেশীরা কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। গাউসের স্ত্রী কাকলী খাতুন ৬ মাস বয়সী ছেলেকে কোলে নিয়ে নির্বাক হয়ে গেছেন। তিনি শোকে পাথর হয়ে যেন কান্নাও ভুলে গেছেন। অগ্নিদগ্ধ গাউসুল আজমের গ্রামের বাড়ি মণিরামপুরের খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে এসব চিত্র চোখে পড়ে।
মণিরামপুরের খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের আজগার আলীর একমাত্র ছেলে গাউসুল আজম ফায়ারম্যান হিসেবে ২০১৮ সালে এ চাকরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে তার কর্মস্থল বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থানা। তবে ছয়মাসের ডেপুটেশনে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার স্টেশনে।
যখন চিকিৎসকরা অগ্নিদগ্ধ গাউসুল আজমকে নিয়ে ব্যস্ত তখনো পিতা আজগার আলীসহ তার পরিবার জানতেন না ছেলের দুঃসংবাদের কথা। রোববার ঘড়ির কাঁটায় যখন সকাল সাড়ে ৭টা তখন ঘরে মোবাইলে শুধুই রিং হচ্ছে। পিতা আজগার আলী ফোনটি রিসিভ করতেই চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার সার্ভিস কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ছেলে গাওসুল আজম অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট হাসপাতালের বেডে। মুহূর্তেই পরিবারের সদস্যরা বজ্রাহতের মত স্তব্ধ হয়ে যান।
শনিবার (৪ জুন) রাত ৮টার দিকে যখন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতেই সেখানে ছুটে যান গাওসুলসহ তার সহকর্মীরা। সেখানেই তার গাড়িতেই আগুন ধরে যায়। এতে তার সহকর্মীদের মৃত্যু ঘটলেও গাওসুল আজম এখনও প্রাণে বেঁচে আছেন। রাতেই তাকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট হাসপাতালে আনা হয়।
প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর আলম জানান, ফায়ারম্যান গাওসুল আজমের শরীরের বিভিন্ন অংশ মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে। সকালে খবর পেয়ে পিতা আজগার আলী, চাচা আকবার আলী, একমাত্র ভগ্নিপতি মিজানুর রহমানসহ আত্মীয় স্বজনরা ছুটে গেছেন ঢাকাতে।
রোববার সন্ধ্যায় গাউসুল আজমের খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে গেলে চোখে পড়ে কেবল মানুষের ভিড়। গ্রামের নারী-পুরুষ যেন সকলেই বাকরুদ্ধ। গাওসুল আজমের মা আছিয়া বেগম কেবল বুক চাপড়াচ্ছেন আর মুর্ছা যাচ্ছেন। বলছেন, আমার বাবাকে আল্লাহ তুমি আমার কাছে সুস্থ করে ফিরিয়ে দাও। তোমার কাছে আমার ছেলেরে ভিক্ষা চাই। গাউসুল আজমের ছয়মাস বয়সী একমাত্র ছেলে সিয়াম মানুষের ভিড়ে প্রতিবেশিদের কোলে রয়েছে। নির্বাক তার স্ত্রী কাকলী খাতুন। কোনো কথাই বলতে পারছেন না তিনি।