ads
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ অপরাহ্ন

আসামি গ্রেফতারের চেয়ে নারীর দোষের খোঁজে পুলিশ!

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ২১ বার পঠিত

কক্সবাজারে স্বামী-সন্তান জিম্মি করে নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় মূল আসামিদের কাউকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয় বিশিষ্টজনের অভিযোগ, পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে আসামি গ্রেফতারের চেয়ে ভুক্তভোগী নারীর ‘দোষ’ খুঁজে বের করাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। এ কারণে ধর্ষকের চেয়ে ভুক্তভোগীকে নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। এদিকে ভুক্তভোগী ওই নারী শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে তিনি অসুস্থ সন্তানকে ‘বাঁচাতে’ টাকা জোগাড় করতে এসে ধর্ষণের শিকার হন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার হোটেল ব্যবস্থাপকের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শুক্রবার বিকালে ‘কক্সবাজার জেলায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবার মানোন্নয়ন বিষয়ে’ জরুরি সভা শেষে ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন-আসামি আশিকুল ইসলাম, মেহেদী হাসান ওরফে বাবু ভুক্তভোগী নারীর পূর্বপরিচিত। তাকে মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে যখন আশিক নিয়ে যায় তখন মূল সড়ক দিয়েই গেছে। এরপর জিয়া গেস্টরুমে যখন যাচ্ছিল, তখন সড়কে অনেক লোকজন ছিল। কিন্তু ওই নারী কোনো ধরনের চিৎকার-চ্যাঁচামেচি করেননি। আমরা চাই প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত হোক। এ রকম ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

একইভাবে ট্যুরিস্ট পুলিশের অ্যাডিশনাল এসপি মহিউদ্দিন আহমেদের ধর্ষণের ঘটনায় দেয়া বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারের পর ওই নারীর ‘চরিত্র’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই পোস্ট করেছেন। অ্যাডিশনাল এসপি বলেছেন, গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে অনেক ‘রহস্য’ পাওয়া যাচ্ছে। এ গৃহবধূ গত কয়েক মাসের মধ্যে কক্সবাজার বেশ কয়েকবার এসেছেন। ওই নারী কক্সবাজারে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত জেনে তারা (ধর্ষণে অভিযুক্তরা) হয়তো বলেছে, এখানে এসব করতে গেলে তাদের চাঁদা দিতে হবে। এছাড়াও তারা ওই নারীর পূর্বপরিচিত।

পুলিশের বক্তব্য প্রসঙ্গে কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক ও স্থানীয় নাগরিক সংগঠন সিভিল সোসাইটিজ ফোরাম কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ভিকটিম নারীকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত পুলিশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বক্তব্য আইন পরিপন্থি ও দুঃখজনক। তাদের উচিত ছিল দ্রুত ধর্ষককে গ্রেফতার করা। তাদের একেকজনের নামে ১৭টি মামলা রয়েছে। তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা। ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তিনি বলেন, নারী পর্যটক, স্থানীয়, অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত বা পতিতা, যাই হোক তাকে ধর্ষণ করার অধিকার কে দিয়েছে? তা ছাড়া দণ্ডবিধির ১৮৬০-এর সেকশন ৩৭৫-এর (ক) তে স্পষ্ট উল্লেখ আছে-নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনসঙ্গম করার চেষ্টা অবশ্যই ধর্ষণ হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে। অথচ উলটো এখন ভিকটিম ওই নারীকে নিয়ে ট্রল হচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল ও আরও সতর্কভাবে বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পুরো ঘটনা বিস্তারিত বলতে গিয়ে ওসব কথা বলতে হয়েছে। মূল কথা হচ্ছে, কারও অসম্মতিতে জোরপূর্বক মিলন করা মানে তাকে ধর্ষণ করা। ওই নারী যদি তার সন্তান বাঁচানোর জন্য অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত হন এটি তার ব্যক্তিগত এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি দাবি করেছেন তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এখন আমরা সব বিষয় মাথায় রেখে মামলাটি তদন্ত করছি। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।

অভিযুক্ত ধর্ষকরা অধরা : অভিযুক্ত আসামিদের চিহ্নিত করে ঘটনার এক দিন পর বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করা হলেও মূল আসামিদের কাউকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি। আসামিরা হল-আশিকুর রহমান ও তার তিন সহযোগী ইস্রাফিল হুদা ওরফে জয় ও মেহেদী হাসান ওরফে বাবু এবং রিয়াজ উদ্দিন ছোটন। ট্যুরিস্ট পুলিশকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে জিয়া গেস্ট ইনের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এদের মধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় আশিকের নামে অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ ১৭টি এবং জয়ের নামে দুটি মামলা রয়েছে। তারা এখনো কক্সবাজার শহরে অবস্থান করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

অপরদিকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামীমুন তানজীনের আদালত শনিবার সন্ধ্যায় ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ব্যবস্থাপক রিয়াজুদ্দিন ছোটনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক রুহুল আমিন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

আদালতে ভুক্তভোগীর জবানবন্দি : শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামীমুন তানজিনের আদালতকে ওই নারী জানান, আট মাস বয়সি অসুস্থ বাচ্চার চিকিৎসায় অর্থ জোগাড়ে স্বামীসহ গত ৩ মাস ধরে কক্সবাজারে এসেছেন। ৮ মাস বয়সি শিশুর হার্টে ছিদ্র রয়েছে। তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। যে কোনো মূল্যে সন্তানকে বাঁচাতে টাকা জোগাড় করাই ছিল তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তার মধ্যে সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করে। একবার বাধ্য হয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছেন। পরে আবার চাঁদা চাইতে গেলে স্বামীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের বাগবিতণ্ডা হয়। এর সূত্র ধরে তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে।

ওই নারী জবানবন্দিতে আরও জানান, তাকে বুধবার রাত ৮টার দিকে সৈকত পোস্ট অফিসের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আশিকের দুই বন্ধু তাকে ধর্ষণ করে। এরপর আশিক তাকে আবার মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় কলাতলী এলাকার জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। তাকে নিয়ে ওই হোটেলের একটি কক্ষে ওঠে আশিক। সেখানে ইয়াবা সেবন করে ধর্ষণের একপর্যায়ে একটি ফোনকলে পুলিশের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে আশিক কক্ষ থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়। ভুক্তভোগী ওই নারী আরও জানান, তিনি হোটেল কক্ষ থেকে বের হয়ে পর্যটন মোটেলের সামনের সড়কে আসেন। সেখানে স্বামীকে দেখতে পান র‌্যাবের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে। র‌্যাব তাকে নিয়ে হোটেল জিয়া গেস্ট ইনে আসেন।

সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

Prayer Time Table

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:১১
  • ১১:৫৯
  • ১৫:৪০
  • ১৭:১৯
  • ১৮:৩৮
  • ৬:৩৬
ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ওয়ালি উল্লাহ
নির্বাহী সম্পাদক
নিউজ রুম :০২-৯০৩১৬৯৮
মোবাইল: 01727535354, 01758-353660
ই-মেইল: editor@sristybarta.com
© Copyright 2023 - SristyBarta.com
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102