আল-কাদরি ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ইমরান খানের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
বুধবার (১০ মে) বিকেলে ইসলামাবাদ পুলিশের সদরদপ্তরে গঠিত বিশেষ আদালতে শুনানি শেষে এই রায় দেয়া হয়।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয় পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের ১৪ দিনের রিমান্ড চেয়ে বিশেষ আদালতে আবেদন করে দেশটির জাতীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)। শুনানি শেষে বিচারক আটদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ইমরান খানের মামলার শুনানিতে বিচারক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ বশির।
একই আদালতে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানকে তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। দুপুরে ইমরান খানকে দুর্নীতি মামলায় বিচারকের সামনে হাজির করা হয়।
ইমরান খানের আইনজীবীরা এমন বিচারকে নাকচ করে দেয়ার মধ্যেই আদালত এই রায় দেয়।
আল-কাদরি ট্রাস্ট মামলার শুনানির শুরুতে এনএবি ইমরানের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার জন্য আদালতকে অনুরোধ করে। তবে, এর বিরোধীতা করেন পিটিআই প্রধানের আইনজীবী খাজা হারিস। আইনজীবী বলেন, ‘আল-কাদরি ট্রাস্ট মামলাটি ব্যুরোর পরিধির মধ্যে পড়েনি। এমনকি, এনএবি এখনও তদন্ত প্রতিবেদনও শেয়ার করেনি।’
খাজা হারিস বলেন, ‘প্রত্যেকেরই সুষ্ঠু বিচারের অধিকার আছে। এই শুনানি একটি খোলা আদালতে হতে পারতো। আল-কাদরি ট্রাস্টের আওতায় যে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সেখানে মানুষ বিনামূল্যে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।’
অন্যদিকে, এনএবির আইনজীবীর বলেন, ‘যখন ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয় তখন তাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কাগজ দেখানো হয়েছিল।’তদন্ত প্রতিবেদনের জবাবে এনএবির আইনজীবী বলেন, ‘যথাযথ কাগজপত্র প্রয়োজনে জমা দেয়া হবে।’
শুনানির সময় ইমরান খান আদালতকে বলেন, ‘যখন আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন পরোয়ানা দেখানো হয়নি। ব্যুরোর অফিসে নেয়ার পর সেটি দেখানো হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা ধরে আমি বাথরুমে যেতে পারিনি। আমার একজন চিকিৎসকের প্রয়োজন।’
সকালে ইসলামাবাদ পুলিশ সদরদপ্তরের ভেতর পুলিশ লাইন গেস্ট হাউজে বসানো বিশেষ এই আদালতে ইমরান খানকে তোলা হয়।
শুনানির স্থান হঠাৎই মঙ্গলবার রাতে পরিবর্তন করে রাজধানী ইসলামাবাদের পুলিশ হেড কোয়ার্টারে নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাতে এক বিবৃতিতে দেশটির চিফ কমিশনার ইসলামাবাদ কপিটল টেরিটোরি কর্তৃপক্ষ জানায়, ইমরান খানের শুনানি আদালত (এফ-৮ জুডিশিয়াল কমপ্লেক্স) থেকে সরিয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের গেস্ট হাউজে নির্ধারিত করা হয়েছে।
দেশটির নির্বাচন কমিশনের করা তোশাখানা মামলার শুনানিতে অংশ নিতে ইমরান খানকে পুলিশ লাইনস গেস্ট হাউজে আনা হয়।
ইমরান খানের আইনজীবী ফয়সাল চৌধুরী অভিযোগ করেন, ইমরান খানের কোটি সমর্থকদের দূরে রাখতেই এমন বিশেষ আদালতে তার শুনানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর ইমরান খানের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে দেয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন এ আইনজীবী।
এদিকে ইমরানের দল পিটিআইয়ের হাজারো নেতাকর্মী-সমর্থকরা বুধবার সকাল থেকেই পুলিশ সদরদপ্তরের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। তাদের সামাল দিতে বিপুল সংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয় সেখানে। সেই সঙ্গে সর্মথকদের ঠেকাতে কনটেইনার দিয়ে বেরিকেড স্থাপন করা হয়।
এর আগে, ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ (১০ মে) দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেয় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারের কয়েক দিন আগে ইমরান খানের ঘোষিত দেশব্যাপী জনসভার সময়সূচি অপরিবর্তিত থাকবে বলেও জানায় পিটিআই।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গ্রেপ্তারের ঘটনায় সহিংস বিক্ষোভের মধ্যে পাঞ্জাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি মোবাইল ইন্টারনেট সীমিত করা হয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন পর্যন্ত ৯৪৫ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ইমরান খানকে মঙ্গলবার বিকেলে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট চত্বর থেকে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় ইমরানকে হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আদালত চত্বর থেকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের সময় হুইলচেয়ার ছুড়ে ফেলা হয় এবং তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ‘অমানবিকভাবে’গাড়িতে তোলা হয় বলে অভিযোগ করেছে তার দল পিটিআই নেতাকর্মীরা।
আল-কাদির ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির পাঁচ হাজার কোটি রুপি বৈধ করার জন্য কয়েকশ কোটি রুপি নিয়েছেন পিটিআই প্রধান ও তার স্ত্রী।
তার গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পাকিস্তান।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারন্টে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।
অন্যদিকে নেটব্লক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, আল কাদির ট্রাস্ট মামলায় পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর টুইটার, ফেসবুক এবং ইউটিউব ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
দুই মামলায় আগাম জামিন নিতে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজির হন ইমরান খান। এ সময় ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে দেশটির রেঞ্জার্স বাহিনী।
ইমরান খানকে আদালত চত্বর থেকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার সমর্থন বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এরপর সংঘর্ষ এড়াতে কর্তৃপক্ষ ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করে।
এদিকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজ্যে আন্দোলন শুরু হয়।
পিটিআই নেতারা আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানকে অচল করে দেয়ার হুমকি দেন।