গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের সদস্য ও সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু বলেছেন, ‘আজ থেকে এই বাজারে টাকা তুলব আমি। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন পর্যন্ত এই বাজার আমার নেতৃত্বে চলবে। কেউ বাধা দিলে তাকে অনেক খেসারত দিতে হবে।’
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের এমসি বাজারে এ মিছিল শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের নূরুল ইসলাম নূরের ছেলে এবং শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বর্তমান সদস্য।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, প্রায় শতাধিক কিশোর-যুবক হাতে রাম-দা নিয়ে মুখে ও মাথায় লাল গামছা পেঁচিয়ে এমসি বাজার প্রদক্ষিণ করে। পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রোড ডিভাইডারের ওপর দাঁড়িয়ে হ্যান্ড মাইকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দেন জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু।
তিনি বলেন, দোকানদার বাসীরা আমি জেল থেকে এসে আপনাদেরকে ঘোষণা দিয়েছিলাম আপনাদের সহযোগিতায় এমসি বাজারটাকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করব। কিন্তু বিএনপির দালাল চক্রদের কারণে আমি এটা করতে পারিনি। আমার সব লোকজন নিয়ে আজকে আমি বাজারে এসেছি আপনাদের সঙ্গে সম্পর্ক করতে এবং আপনাদেরকে সহযোগিতা করতে। আজকের পর থেকে এই বাজারের সব টাকা তুলব আমি। কে বাজার ডাকছে, কে ডাকে নাই সেটা আমার জানার বিষয় না। আমার নেতৃত্বে এ বাজার চলবে। আজকের পর থেকে আমি জাহাঙ্গীর যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন পর্যন্ত এ বাজার আমার নেতৃত্বে চলবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদেরকে আমি দয়া করে বলছি, দোকানদার ভাইয়ের আজ থেকে আপনারা টাকা দেওয়া শুরু করবেন। এখন এ মুহূর্ত থেকে আমার লোকজন খাজনা উঠানো শুরু করবে। কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে প্রতিহত করব এবং তাকে অনেক খেসারত দিতে হবে। তাই সবাইকে উন্মুক্তভাবে বলছি আপনারা কেউ বাধা দিতে আসবেন না। আমাদের কাজ আমাদেরকে করতে দিন। আপনারা কেউ ভয় পাবেন না, আপনাদের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হবে না।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে তারা এমসি বাজারের পূর্ব দিকে হয়ে সাতকাফ মাঠ হয়ে আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় ইউনিয়ন গার্মেন্টসের সামনে দিয়ে চলে যায়।
এ ঘটনায় এলাকাবাসী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে লোকজন দৌড়াঁদৌড়ি শুরু করে। রাম-দা হাতে নিয়ে মিছিল চলাকালে ভিডিও করার সময় এক নারী পথচারীর কাছ থেকে মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়।
শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সারোয়ার হোসেন শেখ বলেন, ‘দল থেকে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। তার অপরাধের বিষয়ে দল অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।’
গাজীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লা বলেন, ‘আমি ফেসবুকের মাধ্যমে ভিডিও দেখে বিষয়টি জনতে পারি। দলের কেন্দ্র থেকেও আমাকে ভিডিও পাঠিয়েছে।’
এদিকে, রাম দা নিয়ে মাথায় ও মুখে লাল গামছা পেঁচিয়ে শতাধিক কিশোর ও যুবকের প্রকাশ্যে মিছিল ও সংক্ষিপ্ত বক্তব্যর ভিডিও মূহুর্তেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুকে দল থেকে সদস্যপদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নেবে না। যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তাদের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখারা নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে সন্ধ্য্যা ৬টায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই চিঠিতে জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লা।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেই ঘটনাস্থলে যাই। বাজারের লোকজনের বলেছে একটি ছেলের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জনের এক দল ছেলে বাজারে মহড়া দিয়েছে। পুলিশ এ ব্যাপারে কাজ করতেছে। আমরা অভিযানে রয়েছি এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’