কাঠগড়া শব্দটি বৃটিশ আমল থেকেই সর্বাধিক পরিচিত। বিচারের জন্য যিনি আসামি হয়ে আসেন তাকে শুনানির সময় কাঠ দিয়ে তৈরি জায়গায় দাঁড়াতে হয়।
সম্প্রতি সেই কাঠগড়ার পরিবর্তে লোহার খাঁচা স্থাপন করা হয়। শুনানির সময় সেই লোহার খাঁচায় প্রবেশ করতে হয় আসামি বা অভিযুক্তকে।
সরেজমিনে দেখা যায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও মহানগর হাকিম আদালতগুলোতে এসব খাঁচা স্থাপন করা হয়েছে। তবে পাশে জেলা ও দায়রা জজ এবং বিচারিক হাকিম আদালতে এ ধরনের খাঁচা নেই।
একজন ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নির্দোষ ধরে নিতে হবে, এটাই ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার মূল নীতি। কিন্তু মামলা হওয়ার পর প্রাথমিক পর্যায়েই লোহার খাঁচায় প্রবেশ নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন খোদ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিটও চলমান রয়েছে।
এর মধ্যেই ঢাকার আদালতে লোহার খাঁচা সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। গত শুক্রবার ঢাকার সিএমএম আদালতের দোতলায় থাকা দুটি এজলাস কক্ষে স্থাপিত খাঁচার উপরের অংশ সরিয়ে নেয় গণপূর্ত বিভাগ।
রোববার (১৮ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায় ওই দুটি আদালতে খাঁচার উপরের অংশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে নিচের অংশ ঠিক আছে। তবে এদিন অন্য সব আদালতে লোহার খাঁচা দেখা যায়।
খাঁচা খুলে নেওয়া আদালতের একজন অফিস সহকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপরের নির্দেশে এটা খোলা হয়েছে।
সিএমএম আদালতের সহকারী নাজির আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দুটি খাঁচার উপরের অংশ খোলা হয়েছে। বাকিগুলো ছুটির দিনে ধাপে ধাপে খোলা হবে। গণপূর্ত অধিদপ্তর এ কাজ করছে।
খাঁচা সরিয়ে ফেলার বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, মানবিকতার চরম বিপর্যয়ের মধ্যে আছে পুরো বাংলাদেশ। ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের দেওয়া মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বারবার যেতে হয়েছে এ লোহার খাঁচায়। শুনানি-হাজিরায় ছোট্ট একটা খাঁচায় আমাদের ২৪ জনকে ঢোকাতো। বাংলাদেশ থেকে সব অমানবিক, ফ্যাসিবাদী উপকরণ উপড়ে ফেলা হবে।
খাঁচা নিয়ে একাধিকবার নিজের অসন্তোষের কথা জানান বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১২ জুন দুদকের করা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত একজন ব্যক্তি নির্দোষ। নিরপরাধ নাগরিককে কেন পশুর মতো খাঁচার ভেতরে দাঁড়াতে হবে। এটা খুবই অপমানজনক। সবাই মিলে আওয়াজ তলুন, একটা সভ্য দেশে কেন এমন হবে? যারা আইনজ্ঞ তারা চিন্তা ভাবনা করে দেখবেন, এটা চলবে নাকি সারা দুনিয়ায় সভ্য দেশে যেভাবে চলে সেভাবে চলবে।
তবে অনেক আইনজীবী মনে করেন জঙ্গি ও দুর্ধর্ষ অপরাধীদের বিচার যেখানে হয় সেখানে নিরাপত্তার জন্য খাঁচা রাখা যেতে পারে।