ওয়াশিংটন সফরে রয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং করেন দুই নেতা। এ সময় বাংলাদেশে গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং এই পটপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেন এক ভারতীয় সাংবাদিক।
জবাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকটে মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’-এর কোনো ভূমিকা নেই। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিষয়টি আমি মোদির কাছে ছেড়ে দিতে চাই!’
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেটের ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের ডিপ স্টেটের এখানে (বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে) কোনো ভূমিকা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) বিষয়টা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। এটা নিয়ে (ভারত) শত শত বছর ধরে কাজ করছে। বস্তুত, আমি এরকমই পড়েছি।’
‘কাজেই বাংলাদেশের বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীর ওপরই ছেড়ে দেব।’ এই বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাশে বসা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করেন।
এদিকে, বিএনপি গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, ভারত যেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ক্ষমতা ধরে রাখতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পরিকল্পিতভাবে বিরোধীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল এবং হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারতের কাছে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ইতিমধ্যে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রয়োজনে পুনরায় এই অনুরোধ পাঠানো হতে পারে। তবে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এটি একটি কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। উপযুক্ত সময়ে তা কার্যকর করা হবে।
প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনে মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের (ওএইচসিএইচআর) ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে বিক্ষোভ সংক্রান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকার ও তাদের সমর্থিত বিভিন্ন বাহিনী ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এই প্রতিবেদন প্রমাণ করেছে যে, শেখ হাসিনা একজন ফ্যাসিস্ট। তিনি এ দেশের জনগণকে নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যা করেছেন। আমরা জাতিসংঘ তদন্ত কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারকে আহ্বান জানাই, শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের অবিলম্বে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক এবং তাঁদের বিচারের সম্মুখীন করা হোক।’