জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা অনুষদ ছাত্রলীগের সভাপতি আবু নাঈম আব্দুল্লাহর নির্দেশে মো. ওয়ালিদ নিহাদ নামে লোকপ্রশাসনের এক ছাত্রকে আবরার স্টাইলে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত দেড় টার দিকে বঙ্গবন্ধু হলের তৃতীয় তলার ৩২৪ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে মারধর করা হয়। আহত শিক্ষার্থী বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে (মমেক) চিকিৎসাধীন।
এ সময় ওই ছাত্রলীগ নেতা ও তার অনুসারীরা ভুক্তভোগী ছাত্রকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। তারা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে রাজনীতি করার জন্য ফোর্স করেন।
মারধরের একপর্যায়ে অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীর হাতে রামদা ধরিয়ে ভিডিও ধারণ করেন; গলায় রামদা ধরিয়ে সরকার বিরোধী কথাবার্তাও বলতে বাধ্য করেন। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রের ফেসবুকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছবি আপলোড করতে বাধ্য করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় ভুক্তভোগী ছাত্রকে রাতেই ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয় পরে সকালের দিকে অসুস্থতা বেড়ে গেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্র প্রক্টর ও হল প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে তিনি ছাত্রলীগ নেতা আবু নাঈম আব্দুল্লাহ, তার অনুসারী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পলাশ, নাট্যকলা বিভাগের হিমেল, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনাবিদ্যা বিভাগের তুহিন, মুমিন, অর্থনীতি বিভাগের তানভীরসহ আরও ৫-৬ জন ছাত্রের নাম উল্লেখ করেছেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপুরে ৭ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি নেন। পরে ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট পৌঁছে দাবির বিষয়ে আলোচনায় বসেন।
এ সময় বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার বলেন, শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবির মধ্যে হল সংশ্লিষ্ট যে বিষয়গুলো রয়েছে তা হল প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। এই বিষয়টি নিয়ে জরুরি মিটিং আহ্বান করা হয়েছে। আজ সোমবারই হল সংশ্লিষ্ট দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়ে এই মিটিং হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, অপরাধী যেই হোক কোনো ছাড় দেয়া হবে না। বিধি অনুযায়ী দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখানে অপরাধীর পরিচয় কিংবা অবস্থান বিবেচনায় নেওয়া হবে না।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৭ দফার মধ্যে রয়েছে-
১. নিপীড়কদের স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে।
২. বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে।
৩. হলের টর্চার সেল বন্ধ করতে হবে।
৪. নিহাদের যাবতীয় চিকিৎসা খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে।
৫. র্যাগিং বন্ধের জন্য এন্টি র্যাগিং সেল গঠন করতে হবে।
৬. সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. রাজনৈতিক অপতৎপরতা ও বাধ্য করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
এ ছাড়াও আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেটি নিশ্চিত করারও দাবি তুলেছে শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।