করোনা টিকার দাম মনে নেই বলে সংসদকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার প্রায় ৩০ কোটি ৫০ লাখ করোনা টিকা সংগ্রহ করেছে। এরমধ্যে ১৮ কোটি টিকা নগদ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। বাকিগুলো কোভেক্সের আওতায় বিনামূল্যে পেয়েছি। তবে দামগুলো এখন মনে নেই। এ বিষয়ে আমাকে নোটিশ দিলে এর দাম এবং কোথা থেকে এসেছে সেটা বলতে পারবো।
মুজিবুল হক চুন্নু তার প্রশ্নে করোনা টিকা কতজনকে দেওয়া হয়েছে, কতগুলো টিকা কেনা হয়েছে এবং উপহার পাওয়া গেছে এবং প্রতিটি টিকা কেনার পেছনে সরকারের ব্যয় কত হয়েছে জানতে চান। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চুন্নুর কাছে লিখিত প্রশ্ন চেয়ে বলেন, ‘এই পর্যন্ত সাড়ে ত্রিশ কোটি করোনা টিকা সরকার সংগ্রহ করেছে। এরমধ্যে ২৬ কোটি টিকা দেওয়া হয়েছে। এক ডোজ করে টিকা দেওয়া হয়েছে ১৩ কোটি মানুষকে, দুই ডোজ করে দেওয়া হয়েছে পৌনে ১২ কোটি এবং দেড় কোটি মানুষকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে। সেটা এখনও চলছে।
অবশ্য এর আগে সংসদে একাধিকার করোনার টিকার দাম জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদকে জানাতে চাননি। তিনি বলেছেন, ‘নন-ক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’র মাধ্যমে টিকা কেনায় সংসদে অর্থ খরচের হিসাব প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।
এদিকে চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নোত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশের ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে কোভিড টিকা প্রদানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ৫ বছরের ওপরের সব জনগোষ্ঠীকে পর্যায়ক্রমে টিকা প্রদান করা হবে। এ পর্যন্ত (১ জুন ২০২২) ১২ কোটি ৮৭ লাখ ৭৩ হাজার ৪৩৬টি প্রথম ডোজ, ১১ কোটি ৭৬ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭১টি দ্বিতীয় ডোজ ও ভাসমান জনগোষ্ঠীকে দুই লাখ ৪৩ হাজার ৯১৮টি টিকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এক কোটি ৫২ লাখ ৮৯ হাজার ৬১০টি বুস্টার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
সরকারি দলের আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই উৎপাদিত হয় বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রায় সব ধরনের ওষুধ রফতানি করা হয়। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার ৩২ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৪০৯ টাকার ওষুধ রফতানি করা হয়েছে।
সংসদের সম্পূরক প্রশ্নে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের মাত্র ৪১ শতাংশ ব্যয় হয়েছে উল্লেখ করে কী কারণে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় করা যায়নি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চান বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে কিছু কাজ ব্যাহত হয়েছে। এই খাতে শ্রমের মূল্য প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেটের ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে ৪০ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, জুন মাস শেষের আগে ৯০ শতাংশের বেশি খরচ হয়ে যাবে এবং লক্ষ্য অর্জন হয়ে যাবে। কারণ, এখনও অনেক বিলের অর্থ পরিশোধ হয়নি। অনেক মাল এখনও পৌঁছায়নি, যার বিলগুলো দেওয়া হয়নি। এগুলো এই জুনের আগে সমাধান হয়ে যাবে।
নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তার স্বার্থে ওষুধের গুনগত মান বজায় রাখা ও মান নিয়ন্ত্রণে সরকার সবসময় সচেতন রয়েছে। নকল, ভেজাল নিম্নমানের ওষুধ বিক্রয়, আনরেজিস্টার্ড ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোরতা অবলম্বন করেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোবাইল কোর্টে ২ হাজার ৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫৪ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।