কুড়িগ্রামের উলিপুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) আওতাধীন সড়কের সংস্কারকাজ শেষ না হতেই বিভিন্ন স্থানের কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজে ফাঁকি দিতে নিম্নমানের সামগ্রী ও পরিমাণে কম বিটুমিন দেওয়ায় কাজ শেষ হওয়ার আগেই কার্পেটিং উঠতে শুরু করেছে।
তবে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের দাবি, ঠিকাদারের সঙ্গে শত্রুতা করে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি রাতের আঁধারে শাবল দিয়ে কার্পেটিং তুলে ফেলেছে, বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
উলিপুর এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের তেজারমোড় থেকে ফকিরপাড়া গ্রামের মৃত নুর ইসলামের বাড়ি পর্যন্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫৪৫ মিটার পাকা রাস্তার সংস্কারকাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রায় ৪২ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দে সংস্কারকাজটি পান রংপুরের এনএন এন্টারপ্রাইজ। তবে কাগজেকলমে এনএন এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হলেও কাজটি সাব কন্ট্রাক্ট নেন উলিপুরের ব্যবসায়ী মাসুদ রানা।
গত বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কিছু লোকজন নিজেদের বাড়ির প্রবেশপথে সড়ক করতে চাইলে ঠিকাদার রাজি না হওয়ায় রাতের আঁধারে শাবল দিয়ে কার্পেটিং তুলে ফেলে।
তবে স্থানীয়দের দাবি, কাজে ফাঁকি দিতে এলজিইডি ও ঠিকাদারের লোকজন নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করায় তিন দিনের মাথায় কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা হযরত আলী, আবু সুফিয়ান ও রিকশাচালক শহিদুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ‘রাতের আঁধারে কার্পেটিং করেন ঠিকাদারের লোকজন। সকালে উঠে দেখি কোনও রকমে দায়সারা কাজ করে গেছেন। বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ায় কাজ করার তিন দিনের মাথায় কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে।’ রাতের আঁধারে কেউ কার্পেটিং তুলেছে কিনা সে ব্যাপারে এলাকার লোকজন অবগত নন বলে জানান তারা।
এলজিইডির উলিপুরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আকরাম হোসেন জানান, কাজের মান খারাপ হয়নি। শুনেছি স্থানীয় কিছু লোক নিজেদের বাড়ির প্রবেশপথে পকেট কার্পেটিং করতে চাইলে ঠিকাদার তাতে রাজি হননি। এতে এলাকার কিছু লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে কার্পেটিং তুলে ফেলেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আকরাম হোসেন বলেন, ‘ কাজ খারাপ হলে সড়কের পুরো কার্পেটিং উঠে যাওয়ার কথা। কিন্তু স্থানে স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে যা কেউ ইচ্ছা করে তুলেছে। বিষয়টি সরেজমিন দেখতে আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে সাব কন্ট্রাক্টর মাসুদ রানার ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা প্রকৌশলী কেকেএম সাদেকুল আলম বলেন, ‘আমি ছুটিতে ঢাকায় আছি। ঘটনাটি শুনেছি। তবে কাজের ত্রুটির কারণে এমনটি হয়নি। এলাকার কিছু লোকজনের সঙ্গে ঠিকাদারের ঝামেলা হওয়ায় শাবল দিয়ে কার্পেটিং তুলে ফেলেছে বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে।’
‘বিষয়টি সমাধানে আমাদের একটু সময় দিন। কাজ খারাপ হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। প্রয়োজনে পুনরায় ল্যাব টেস্ট করে কাজ করা হবে। আমি ফিরে এ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’ যোগ করেন উপজেলা প্রকৌশলী।
কেউ শত্রুতাবশত এমনটা করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারের বরাত দিয়ে বলেন, ‘ঝামেলা এড়াতে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে।’