জুলাই-আগস্ট গণহত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরীর তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে শুনানিতে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর এডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ওবায়দুল কাদের তিন মাস দেশেই ছিলেন এই তথ্য জানা ছিল না। তথ্য থাকলে সরকার তাকে ধরে ফেলতো।
ওদিকে গতকাল শুনানি শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের বিষয়ে শুনানি নিয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন বা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তদন্তের পূর্ণাঙ্গ বা অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২ মাস সময় দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৮ই ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি ওবায়দুল কাদের গত তিন মাস বাংলাদেশে ছিলেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও তিনি বাংলাদেশের কোথায় এবং কীভাবে ছিলেন। কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি কীভাবে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করেছেন। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে একটি ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই ব্যাখ্যা যেন দেয়া হয় সে ব্যাপারে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি জাতীয় ট্রাইব্যুনাল। এটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজ করছে। এই ট্রাইব্যুনালের আদেশ-নির্দেশ যদি কোনো সংস্থা বা বাহিনী না মানে তাহলে রাষ্ট্রের কাজে অসহযোগিতা হিসেবে গণ্য হবে। তারা আইন অনুযায়ী কাজ করছেন না এটাই ধরে নেয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধেও আইন অনুযায়ী অগ্রসর হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে আমরা এখনই সেদিকে যাবো না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত ৮ই নভেম্বর কলকাতায় পৌঁছেছেন উল্লেখ করে গত সোমবার মানবজমিন প্রথম তথ্য প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ওবায়দুল কাদের গত ৮ই নভেম্বর কলকাতায় পৌঁছেছেন। তিনি বিশেষ ব্যবস্থায় ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলং পৌঁছান। সেখান থেকে যান কলকাতা। তিনি এখন কলকাতাতেই অবস্থান করছেন।
সরকারের কাছে কোনো তথ্য ছিল না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনো তথ্য ছিল না। আমরা যদি জানতাম, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতো। মঙ্গলবার ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক বিশেষ বৈঠকের পর এ মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত ৮ই নভেম্বর কলকাতায় পৌঁছেছেন উল্লেখ করে গত সোমবার মানবজমিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, আপনারা একটা উদাহরণ দেন যে কেউ লুকিয়ে আছে আমরা জেনেও তাকে ধরিনি। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইন্টারপোলকে একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং পরে আবার তাদের নোটিশ জারি করার কথা মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে। গায়েবি মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আবারো নিশ্চিত করতে চাই যে যারা দোষী নন তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। পরিবর্তনে সময় লাগে। আমরা দুইদিনের মধ্যে সব পরিবর্তন করতে পারবো না। এর জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো আছে। ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস নিয়ে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। এই হবে, ওই হবে বলেছিল। কিন্তু দুটি দিবস ভালোভাবে শেষ হয়েছে। ২৫শে ডিসেম্বর বড়দিন ও ৩১শে ডিসেম্বর থার্টিফার্স্ট নাইটও ভালোভাবে শেষ হবে। পুলিশের মনোবলে আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাদের মনোবল বেড়েছে। একটা বড় ঘটনা ঘটার পর দুইদিনে পরিবর্তন আসবে না। একটা ঝড় হয়ে গেলে ঘরবাড়ি সংস্কারে সময় লাগে।
অনেক পুলিশ কাজে যোগ দিয়েও মামলার আসামি হওয়ার কারণে পালিয়ে গেছেন, এমন বক্তব্যের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কাজে যোগ দেয়ার পর পুলিশ পালিয়ে গেছে, এমন সংবাদ নেই। তারা কাজেই যোগ দেয়নি। আগের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন ১৬ জন সংসদ সদস্য ছিল। সবাইকে তিনি আগে ভাগিয়ে দিয়েছেন। এখানেও এমন কিছু ঘটেছে। যেসব পুলিশ সদস্য পালিয়ে আছে, তারা অপরাধী। তাদের যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরা হবে। কেউ খবর দিতে পারলে অপরাধীদের ধরা হবে।