এ লেখা যখন লিখছি তখন সরকারি হিসাব অনুযায়ী, করোনায় এক দিনে ৬৩ জনের মৃত্যু ও আক্রান্ত ৭৪৬২ জন। প্রতিটি মৃত্যুই কষ্টের। কোনো মৃত্যুই মেনে নেয়া যায় না। এটা সত্য যে করোনার ভয়াল থাবায় পুরো পৃথিবী বিপর্যন্ত। মানুষ অসহায়। যেখানে শক্তিশালী দেশগুলোও করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের মতো ছোট একটি দেশ করোনা কিভাবে মোকাবিলা করবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে।
তবে সার্বিক দিক বিবেচনা করলে করোনার প্রথম পর্যায়ে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছিল। এখন সর্বক্ষেত্রে ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে।
গত ৫ই এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী লকডাউন চলছে। এ দফার লকডাউন নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। সরকার শিল্প-কারখানা ও পোশাক কারখানা খোলা রেখেছে। চলছে বই মেলা। সবকিছুর দরকার আছে। কিন্তু একদিকে বই মেলা চলবে। অন্যদিকে পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তাহলে কেন সাধারণ মানুষ লকডাউন মেনে চলবে এ প্রশ্ন করাটাই স্বাভাবিক।
দু’তিন না যেতেই সবগুলো সিটিতে বাস চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকে খুলে দেয়া হয়েছে শপিংমল। সরকার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে খেটে খাওয়া মানুষকে নির্দেশ দিচ্ছে।
এদিকে ১৪ই এপ্রিল থেকে সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সর্বাত্মক লকডাউনের ইঙ্গিত দেন।
জীবন বাঁচাতে ও করোনার প্রকোপ কমাতে লকডাউনের বিকল্প নেই এটা সত্য। কিন্তু কথা হচ্ছে লকডাউনের আগে সাধারণ মানুষের কথা ভাবতে হবে। পুনরায় লকডাউন দেয়ার আগে খেটে খাওয়া ও অসহায় মানুষের রুটি-রুজি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে সরকারের লকডাউন পালিত হবে বিএনপির হরতালের মতো। কেননা ক্ষুধার্ত পেট করোনাকে ভয় পায় না। মানুষের রুটি-রুজি নিশ্চিত না করে লকডাউন কেন কারফিউ দিলেও তা বাস্তবায়িত হবে বলে মনে হয় না। তার প্রমাণ মিলেছে সোমবার থেকে চলা লকডাউনে।
ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো লকডাউন চলাকালে সরকারি-বেসরকারি সকলের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করেছে। ইংল্যান্ডের কথা উদাহরণ হিসেবে বলি সেখানে কাজ না করেও সেখানকার কর্মচারীরা ৮০ ভাগ বেতন পাচ্ছেন দীর্ঘিদিন ধরে।
কেউ বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করলেও লকডাউন চলাকালে সেখানকার সরকার বেতন-ভাতা নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশে হয়তো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু যারা বেসরকারি খাতে কাজ করছেন তারা কাজ না করে কয় টাকা বেতন পেয়েছেন তার হিসাব কি সরকারের কাছে আছে? খোঁজ নেয়া হয়েছে গ্রামের কৃষকদের? ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের? রিকশা চালকের?
এই মহামারিতেও তৈরি হয়েছে সাহেদ-সাবরিনা ও পিকে হালাদার। তাদের কাউকে কাউকে ধরা হয়েছে এটা সত্য। কিন্তু তাদের গড ফাদাররা এখনো ধরা-ছোয়ার বাইরে।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি নাগরিকের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবন-ধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা। সংবিধানের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
লেখক
ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার