সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে এবার আরেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মালিবাগের জেএস হাসপাতালে দশ বছর বয়সী ছেলে আহনাফ তাহমিনকে সুন্নতে খতনা করতে নিয়ে যান বাবা ফখরুল আলম। রাত আটটার দিকে খতনা করানোর জন্য অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পর আর ঘুম ভাঙেনি আহনাফের। এর ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতালটির পক্ষ থেকে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা ও এনজিও সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটি।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান আনোয়ার-ই-তাসলিমা প্রথা এ ঘটনার উদ্বেগ জানিয়ে এক বিবৃতি দেন। গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে তিনি জানান, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আহনাফ তাহমিন আয়হামের মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। আহনাফের চিকিৎসায় চিকিৎসকদের কোনো গাফিলতি ছিলো কিনা; স্বাস্থ্য বিভাগকে সুষ্ঠু তদন্ত করার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি আহনাফের এমন মৃত্যু কোনভাবেই কাম্য নয়। মালিবাগের ওই জেএস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়সারা আচরণে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তাদের পেপারস-ডকুমেন্টস সঠিক ছিলো কিনা; তা খতিয়ে দেখার দাবি জানাচ্ছি। এবং ঘটনার আগে ও পরে তাদের দায়সারা আচরণের জন্য আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও জানাচ্ছি। এর আগে ৮ জানুয়ারি রাজধানীর সাতারকুল বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে লাইফ সাপোর্টে থাকা শিশু আয়ান মারা যায়। এভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থা চলতে পারেনা। দেশের মানুষ এমন চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাবে। তাই দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জোড় দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, রাজধানীর মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জন ডা. এস এম মুক্তাদিরের তত্ত্বাবধানে মঙ্গলবার রাতে সন্তানকে সুন্নতে খৎনা করাতে আসেন শিশু আয়হামের বাবা ফখরুল আলম ও মা খায়কুন নাহার চুমকি। রাত আটটার দিকে খৎনা করানোর জন্য অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পর আর ঘুম ভাঙেনি আহনাফের। এর ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতালটির পক্ষ থেকে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আহনাফের বাবা ফখরুল আলম বলেন, আমরা চিকিৎসককে বলেছিলাম যেন ফুল অ্যানেস্থেসিয়া না দেওয়া হয়। তারপরও আমার ছেলের শরীরে সেটি পুশ করেন ডাক্তার মুক্তাদির। আমি বারবার তাদের পায়ে ধরেছি। আমার ছেলেকে যেন ফুল অ্যানেস্থেসিয়া না দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আমার সন্তানকে অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই মৃত্যুর দায় মুক্তাদিরসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবারই। আমি তাদের কঠোর শাস্তি চাই।
এদিকে ঘটনার পরই ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে উধাও হয়ে যান অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. মুক্তাদির। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অর্থোপেডিক বিভাগের জয়েন্ট ব্যথা, বাত ব্যথা, প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা দিতেন বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ৮ জানুয়ারি রাজধানীর সাতারকুল বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে লাইফ সাপোর্টে থাকা শিশু আয়ান মারা যায়। টানা সাত দিন লাইফ সাপোর্টে ছিল আয়ান।