শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ে নতুন একটি সিনেমার শুটিং চলছে। শুটিং টিম গত কয়েক দিন ধরে উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার গারো পাহাড়ি বিভিন্ন লোকেশনে সিনেমাটির দৃশ্য ধারণ করছেন। আর এরইমধ্যে কয়েকটি লোকেশনে বন্যহাতি হানা চালিয়েছে। বনের মধ্যে সিনেমার শুটিং নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপক সমালোচনা হচ্ছে, পাশাপাশি প্রতিবাদ জানিয়েছে পরিবেশবাদীরা।
সম্প্রতি এ ছবির শুটিং চলাকালে বন্য হাতির দল আক্রমণ করে। সেই মুহূর্তে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় পুরো টিমকে। খবরটি উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে। যা নজরে পড়ে অভিনেত্রী জয়া আহসানের। সামাজিকমাধ্যমে এক প্রক্রিয়ায় তিনি ক্ষোভ জানিয়ে লেখেন, বনের ভেতর শুটিং করা মোটেই উচিত না।
শুক্রবার (৩০ মে) জয়ার সুরে কথা বললেন অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে নওশাবা লিখেছেন, আমরা অনেকেই মনে করি পৃথিবীটি শুধু মানুষের জন্য সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পৃথিবী সব জীবের জন্য। মানুষ, পশু-পাখি, গাছপালা, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত সবাই মিলে পৃথিবী গড়ে তুলেছে। এই পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রত্যেকটি প্রাণী ও উপাদান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আজ মানুষ নিজের স্বার্থে পৃথিবীর এই ভারসাম্য নষ্ট করছে।
তিনি যোগ করেছেন, ‘আমরা ক্রমশ হারাচ্ছি আমাদের নদী। যেসব নদী এক সময় মানুষের জীবন ও কৃষির মূল আশ্রয় ছিল, এখন সেগুলো দখল, দুষণ ও নাব্যতা সংকটে ধুঁকছে। একইভাবে গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে অবাধে। ফলে আমরা হারাচ্ছি বিশুদ্ধ বাতাস, হারাচ্ছি জীববৈচিত্র্য। শহরের বাতাস এখন ধোঁয়ায় ভরা, শিশু-বৃদ্ধ সবার শরীরেই পড়ছে এর নেতিবাচক প্রভাব।’ ওই পোস্টে অভিনেত্রী কাজী নওশাবা পরিবেশ রক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন।
সবশেষে তিনি লিখেছেন, আমরা যেন কখনো ভুলে না যাই—পৃথিবী শুধু মানুষের নয়, পৃথিবী সকল প্রাণীর।’
এদিকে জয়া আহসানের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় ‘শাপলা শালুক’ ছবির পরিচালক লাজুক বলেন, ‘এটা দুঃখজনক। অবাক হয়েছি। কেননা শুটিংয়ে হাতির আক্রমণ হয়েছে শুনে তিনি (জয়া আহসান) ফোন করে আমাদের একটা খবর নিতে পারতেন। এখানে বুবলী আছেন, আব্দুন নূর সজল আছেন। সজলের সঙ্গে তার অনেক কাজ হয়েছে। ওই জায়গা থেকেও খোঁজ নিতে পারতেন আমরা ঠিক আছি কি না। তা না করে উল্টো আমাদের শুটিং বন্ধের আহ্বান জানালেন! ওনার কাছে এরকম আচরণ আশা করিনি।’
ডিপ ইকোলজি এবং স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, এমন একটা বনের ভিতর কিভাবে তারা শুটিং করছে। শুটিংয়ের শব্দে এবং শুটিং দেখতে আসা লোকজনের কারণে বনের অনেক কীটপতঙ্গ, সাপসহ ছোট বড় অনেক প্রাণী ভয়ে অন্যত্র মুভ করতে পারে। তাছাড়া মারাও যেতে পারে। এবং এসব কারণে অনেক প্রাণী ট্রমায় ভুগবে। এজন্য এখানে শুটিং বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
রিচার্স অ্যান্ড কনজারভেশন অব এলিফ্যান্ট বাংলাদেশের সভাপতি আসিফুজ্জামান পৃথিল বলেন, দেশের অন্যান্য বনের তুলনায় গারো পাহাড়ের শেরপুর জেলায় হাতির দলের সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে রাতে এবং দিনে প্রায় সবসময় হাতির দলগুলো ঘুরাফেরা করে, খাবার খোঁজে। একদিকে কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোকজন দলগুলোকে ডিস্টার্ব করে। আর তার চেয়েও মারাত্মক হুমকি হচ্ছে, গভীর বনে কিভাবে শুটিং করা হচ্ছে। এখানে আসা লোকজন, শব্দ সবকিছু মিলিয়ে স্থানীয় হাতিগুলোকে উত্যক্ত করা হচ্ছে। দ্রুত এখানে এসব উত্যক্ত বন্ধ করতে হবে।