মহেমুনুজ্জামান ওরফে প্রতীক খন্দকার আর জান্নাতুল জেরিন স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ভাড়া থাকতেন বিভিন্ন বাসায়। এরপর সংশ্লিষ্ট বাসাসহ আশপাশের এলাকায় টার্গেট করা তরুণী ও কিশোরীদের বিদেশে বড় চাকরির প্রলোভন দেখান। শেষ পর্যন্ত চাকরি দেওয়ার নামে বিদেশে অন্য চক্রের কাছে তাদের বিক্রি করে দিতেন তারা। এক কিশোরীকে ভারতে পাচারের ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
ওই ঘটনার মূল হোতা প্রতীক খন্দকারকে গত সোমবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তারের পর তরুণী ও কিশোরীদের বিদেশে বিক্রির চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় সিআইডি। এর আগে জেরিনসহ চক্রের আরেক সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছিল।
সিআইডি জানায়, গত বছর প্রতীক ও জেরিন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সবুজবাগের একটি ফ্ল্যাটে সাবলেট ভাড়া নেন। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওই ফ্ল্যাটের ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে বিদেশে চাকরি দিতে পারবেন বলে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন তারা। এক পর্যায়ে নানা প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরীকেও মালয়েশিয়া যেতে রাজি করান। ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর ওই কিশোরীকে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে বেনাপোলের একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়। সেখানে চক্রের সদস্যরা ধর্ষণ করে তাকে। ওই কিশোরীকে ভারতে পাচারের জন্য দালালদের কাছে বিক্রির সময় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় কিশোরীর মা সবুজবাগ থানায় মামলা করলে পুলিশ সদর দপ্তর মামলাটির তদন্ত এবং চক্রের হোতাদের চিহ্নিত করতে সিআইডিকে দায়িত্ব দেয়।
মানব পাচার চক্রের হোতা প্রতীক খন্দকারকে গ্রেপ্তারের বিষয় জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সিআইডি কর্মকর্তারা। সেখানে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, ‘আসামি প্রতীক ও জেরিন উভয়েই প্রতারক। এরা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একত্রে বসবাস ও বিদেশে পাঠানোর জন্য নারীদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে তাদের ভারতে দালাল চক্রের কাছে বিক্রি করে দিত। বিক্রির পর এসব নারীকে জোরপূর্বক অশালীন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করা হতো। এভাবে বিভিন্ন নারীকে বিদেশে বিক্রি করেছে তারা।’
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, সবুজবাগের মামলার আগেই দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা আদালতে জবানবন্দি দেয়। এরপর চক্রের মূল হোতা প্রতীক খন্দকারকে গ্রেপ্তারে অনুসন্ধান শুরু হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের তদন্ত ও অনুসন্ধানের পর ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি আইনে পৃথক দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
সিআইডির আরেক কর্মকর্তা বলেন, প্রতীক খন্দকারের চক্র এর আগে এক নারীকে সৌদিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ভারতে পাচার করেছে। চক্রটি মূলত বিভিন্ন তরুণী ও কিশোরীকে টার্গেট করে মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। শুরুর দিকে কোনো টাকাও নেয় না। কিন্তু এরা এসব দেশে না পাঠিয়ে ভারতে দালালদের কাছে তাদের বিক্রি করে দেয়। এই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।