ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক বেহাল দশা কাটছে না। চাঁদাবাজির অভিযোগে বছরখানেক আগে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কমিটির সহ-সভাপতিকে সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হলেও সাংগঠনিক কাজে গতি আসেনি। নতুন নেতৃত্ব একটি সাংগঠনিক জেলারও সম্মেলন বা কমিটি করতে পারেনি। এমনকি প্রায় এক বছর ধরে শূন্য থাকা কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় অর্ধশত পদও পূরণ হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সারা দেশের ১১১টি সাংগঠনিক জেলায় কার্যক্রম চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে।
সংগঠনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক কাজ তত্ত্বাবধানের জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে একটি সাংগঠনিক টিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংগঠনের সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সহসম্পাদক, সম্পাদক, উপসম্পাদক ও সদস্যদের নিয়ে এই টিম গঠন করা হয়। কিন্তু ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনের পর গঠিত কমিটির সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টন হয়নি আজও। এরই মধ্যে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত ৩১ জুলাই।
জানা যায়, ছাত্রলীগের ১১১টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির প্রায় সবই মেয়াদ পেরিয়ে গেছে। এক বছর মেয়াদি কমিটিগুলো বেশ কয়েক বছর ধরেই মেয়াদোত্তীর্ণ। কাউন্সিলের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কেন্দ্রীয় কমিটি। অন্তত ২০ জেলা ও মহানগরে এক বছর মেয়াদি কমিটিগুলো পাঁচ থেকে ৯ বছর ধরে বহাল রয়েছে। কয়েকটি জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটিই নেই।
সূত্রগুলো জানায়, বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটি হয় ২০১১ সালে। ৯ বছর ধরে সেই কমিটিই রয়ে গেছে। ২০১৩ সালে গঠিত চট্টগ্রাম মহানগর কমিটিরও একই অবস্থা। এ ছাড়া পঞ্চগড়ে ২০১৫, নাটোর, নেত্রকোনা ও কুমিল্লা উত্তরে ২০১৪ এবং খুলনা মহানগর, বগুড়া জেলা ও ফেনীতে সর্বশেষ ২০১৫ সালে কমিটি হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিও হয় অন্তত চার বছর আগে। এ ছাড়া রংপুর বিভাগের একাধিক জেলায় কয়েক বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে সংগঠন।
নড়াইল, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়—এই পাঁচটি সাংগঠনিক জেলার কমিটি হয় শোভন ও রাব্বানী দায়িত্বে থাকার সময়। শোভন ও রাব্বানীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমান নেতৃত্ব সম্মেলন হওয়া জেলাগুলোতেও কমিটি করতে পারেনি।
সিলেট জেলা ও মহানগর, ময়মনসিংহ মহানগর, গাজীপুর মহানগর, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি নেই দীর্ঘদিন ধরে। সম্মেলনের এক বছরেও কমিটি হয়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল ইসলাম কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও ইডেন কলেজ শাখার। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কমিটিগুলোও মেয়াদ হারিয়েছে অনেক আগেই। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের কমিটি অনেক দিন আগেই বিলুপ্ত করা হয়েছে।
বয়সের ফাঁদে ঝরে যান অভিজ্ঞরা: ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসার বয়স সীমা ২৭ বছর। বিশেষ বিবেচনায় আরো দুই বছর বৃদ্ধির রীতি চলে আসছে। কিন্তু কমিটির মেয়াদপূর্তির এক-দুই বছর পর পর সম্মেলন হলে অনেক অভিজ্ঞ নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়ার সুযোগ হারান।
ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্সিল হলে নেতৃত্বের জট সৃষ্টি হয় না। দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমান কমিটির মেয়াদে সাংগঠনিক কাজ হয়নি।’
সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান বলেন, ‘গঠনতন্ত্র মেনে নিয়মিত কাউন্সিল হওয়া উচিত। এতে করে যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতারা নেতৃত্বে আসার সুযোগ পাবে।’
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা দায়িত্ব পাই। তখন সংগঠনের ভাবমূর্তি হুমকিতে ছিল। সংগঠনও বিশৃঙ্খল ছিল। সেগুলো সামাল দিয়ে সংগঠনকে একটা সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে এনেছি। এখন সাংগঠনিক কাজগুলো শুরু করব।’