কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে ‘জয় বাংলা’ কনসার্টে ক্রিপটিক ফেইট, নেমেসিস, আরবোভাইরাস, পপাই বাংলাদেশ ও সংগীতশিল্পী অনি হাসান আগেই অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ব্যান্ড শিরোনামহীন, মেঘদল, ইন্দালো, দৃক ও অ্যাভোয়েডরাফা-এর নাম।
জয় বাংলা কনসার্ট বর্জন প্রসঙ্গে ব্যান্ড শিরোনামহীনের ভাষ্য, ‘অনেক প্রশ্নের উত্তর হিসেবে সবার অবগতির জন্য একটা তথ্য জানাতে চাই, শিরোনামহীন সাত বছর ধরে কোনো জয় বাংলা কনসার্টে পারফর্ম করেনি। আসলে শিরোনামহীনকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। ভবিষ্যতে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও আমরা সেটা প্রত্যাখ্যান করব, এই তথ্যটাও আপনাদের দিয়ে রাখলাম। যারা নিয়মিত পারফর্ম করতেন, তাদের অনেকেই কনসার্টটি বয়কট করেছেন। তাদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।’
গত দুই বছর জয় বাংলা কনসার্টে পারফর্ম করেছে ব্যান্ড মেঘদল। ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে তারা এ কনসার্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মেঘদল থেকে জানানো হয়েছে, ‘ছাত্রদের উত্থাপিত ন্যায্য দাবির বিপরীতে সরকারের দমননীতি এবং তৎপরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দলীয়করণ এবং পুলিশের গুলিতে সাধারণ মানুষের মৃত্যু ও দেশে বিরাজমান নাগরিক অধিকার পরিপন্থী সকল কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে গণজাগরণে মেঘদল একাত্ম। দুই বছর ধরে মেঘদল জয় বাংলা কনসার্টে পারফর্ম করার জন্য ডাক পাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, দেশের এই একমাত্র বড় কনসার্ট আয়োজন সরকারের কর্মকাণ্ডের কারণে তরুণদের কাছে আবেদন হারিয়েছে। মেঘদল তরুণদের এই আবেগকে সম্মান জানিয়ে জয় বাংলা কনসার্টের সামনের আয়োজনগুলো থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।’
জয় বাংলা কনসার্ট বর্জন করার পাশাপাশি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সব হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সব ধরনের গণ-হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে মেঘদল।
মেঘদলের মতো জয় বাংলা কনসার্টে পারফর্ম করা ব্যান্ড অ্যাভোয়েডরাফাও এই আয়োজন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। অ্যাভোয়েডরাফার ব্যান্ডের পেজে লেখা হয়েছে, ‘জয় বাংলা কনসার্ট আমাদের আনন্দের জায়গা, আমাদের মহান স্বাধীনতা এবং বিজয় উদ্যাপনের জায়গা। কিন্তু আহত হৃদয়, পরাজিত মন কিংবা ভেজা চোখ নিয়ে উদ্যাপন হয় না। করা যায় না। আমরাও পারছি না। বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান রেখে আমরা অ্যাভোয়েডরাফা জয় বাংলা কনসার্ট থেকে আমাদের নাম প্রত্যাহার করছি।’
জয় বাংলা কনসার্ট বর্জন করে ব্যান্ড ইন্দালোর ফেসবুক পেজ থেকে লেখা হয়েছে, ‘মেধাভিত্তিক না হয়ে কোটাভিত্তিক হওয়ার জন্যই সম্ভবত আমরা কখনো জয় বাংলা কনসার্টের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। এ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক কিংবা দলীয় কনসার্টেই আমরা ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহী না। কাজেই জয় বাংলা কনসার্টে আমাদের ভবিষ্যৎ অংশগ্রহণের কোনো রকম সম্ভাবনা নেই।’
দৃক ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, ‘আমরা দৃক জয় বাংলা কনসার্ট বয়কট করছি বলে বাহবা পেতে চাই না। কারণ, দৃক কখনো আমন্ত্রণই পায়নি। সম্ভাবনাও নাই পাওয়ার। যারা নিয়মিত এ আয়োজনে পারফর্ম করতেন, তাদের মধ্যে অনেকেই বয়কট করেছেন এবং করছেন। সবার সিদ্ধান্তকেই সাধুবাদ জানাই। এ আয়োজনে যদি ভবিষ্যতে আমাদের আমন্ত্রণ জানানোও হয়, সেটা আমরা গ্রহণ করব না।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দিনটির সঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে সংযুক্ত করতে ২০১৫ সাল থেকে নিয়মিত আয়োজন করা হয় ‘জয় বাংলা কনসার্ট’।